ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ বাবা বিষ্ণুজ্যোতি পাল কর্মসূত্রে আমেরিকার উইলমিংটনের এক মাল্টিন্যাশানাল আইটি কোম্পানীর সফটওয়ার ইঞ্জিনীয়ার। সেই সুত্রে মা মোনালি দিকপতি পাল ও সদ্য চার বছরে পা দেওয়া ছোট্ট সানাও সেখানকার বাসিন্দা। কিন্তু আদি জন্মভিটে পূর্ব বর্ধমানের গলসি। তাই মুগ্ধা পাল তথা সানার চতুর্থ জন্মবার্ষিকীটা বিদেশে পালনের সাথে সাথেই একই সাথে পালিত হল বর্ধমান ষ্টেশন ও ষ্টেশন সংলগ্ন অনাথ দুঃস্থ শিশুদের সাথে। বৃহস্পতিবার দুপুর টা তাই তাদের কাছে হয়ে থাকল উৎসবের মত।
সানার মা, বাবা ও পরিবারের সকল সদস্যদের ইচ্ছানুসারে ছোট্ট সানার জন্মদিন পালিত হল বর্ধমান ষ্টেশনের ৮ নাম্বার প্লাটফর্মে। সানার জন্মদিন উপলক্ষে ষ্টেশন চত্বরের অনাথ শিশু ও দুঃস্থ মানুষদের ভুড়ি ভোজের আয়োজন করা হল বৃহস্পতিবার। মেনু ছিল ভাত, ডাল, পোস্ত, মুরগীর মাংস, চাটনি, রসগোল্লা ও আইসক্রীম। খুবই যত্নের সাথে সন্তান স্নেহে জীর্নকায় শীর্নকায় শিশুগুলিকে নিজের হাতে খাদ্য পরিবেশন করছিলেন সানার বাবার বড় মামা হরনাথ দত্ত। তাকে যোগ্য সঙ্গদান করছিলেন তারই সুপুত্র লিওনিড দত্ত ও অন্যান্যরা। ভুড়িভোজের ব্যবস্থা ছাড়াও অনাথ ও দুঃস্থ ছেলে মেয়েদের জন্য দুর্গাদেবী ফাউন্ডেশনের কর্ণধার তথা সমাজসেবী দূর্গাদেবীর হাতে নতুন নতুন জামা, প্যান্ট, স্কার্ট সহ বিভিন্ন পোশাক তুলে দেন উদ্যোক্তারা। খুশীর আবহ ছড়িয়ে পরে শিশুদের মনে। বড় ছোট মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশোর কাছাকাছি দুঃস্থ মানুষ এদিন দুপুরের ভোজনে অংশগ্রহন করেন।
সানার প্রবাসী বাবা বিষ্ণুজ্যোতি পাল জানিয়েছেন, কর্মসূত্রে তারা উইল্মিংটনের বাসিন্দা হলেও শিকড়ের টান রয়ে গেছে বর্ধমানেই। খুব ইচ্ছা ছিল স্বশরীরে সপরিবারে বর্ধমানে এসে অনাথ শিশুদের সাথে মেয়ের জন্মদিন পালন করার। কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় তাদের সেই ইচ্ছা দমন করতে হয়। তবে তাদের ইচ্ছা পূরনে এগিয়ে আসেন তার দুই মামা হরনাথ ও রমানাথ দত্ত এবং মামাতো ভাই লিওনিড দত্ত এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা। তারাই সমস্ত উদ্যোগ নিয়ে সমগ্র বিষয় টি পরিচালনা করেন।
হরনাথ বাবু জানান, ভাগ্নার ইচ্ছাকে পূর্ন করতে তারাই উদ্যোগ নিয়ে এই আয়োজন করেন। তবে এই প্রথমবার নয় এর আগেও বাড়ির বিভিন্ন আনন্দানুষ্ঠানে তাদের পক্ষ থেকে ষ্টেশনের দুঃস্থ ও অনাথ শিশুদের খাওয়ানোর আয়োজন করে আসছেন। তাদের এ বিষয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দূর্গাদেবী ফাউন্ডেশন। যাদের দুবেলা ভাত জোগার করতে হিমসিম খেতে হয়, কখনো খেয়ে, কখনও না খেয়ে কেটে যায় যাদের শৈশব - সেই অভুক্ত জীর্ন শীর্ন শিশুদের জন্য খাবারের আয়োজন করে তাদের মুখে যে হাসি টুকু দেখতে পাওয়া যায় সেই পরিতৃপ্তি আর কোন কিছুতেই খুঁজে পাওয়া যায় না বলে জানান হরনাথ বাবু।
এদিন তিনি বর্ধমানের মানুষের কাছে পারিবারিক বা সামাজিক যে কোন আনন্দানুষ্ঠান পালনের সাথে সাথে সামর্থ্য মত এই অনাথ ও দুঃস্থ শিশুগুলির জন্যেও কিছুটা সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবার আবেদন জানান।