ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ বছর কয়েক আগে শৌচালয় তৈরির জন্য টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও তৈরি হয়নি শৌচালয়। এখন পঞ্চায়েত থেকে বলা হচ্ছে বাড়িতে শৌচালয় না থাকলে আগামীতে রেশন বন্ধ করে দেওয়া হবে। এর জেরে চরম সমস্যায় পড়েছেন বালুরঘাট ব্লকের ১০ নম্বর অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের ডুমইর ও চকামদ সংসদের অধিকাংশ বাসিন্দা। তাই বাড়িতে শৌচালয় না থাকলেও, তা আছে বলে গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মীদের কাছে ভুয়ো তথ্য দিচ্ছেন তাঁরা। টাকা দেওয়া সত্ত্বেও কেন শৌচালয় হয়নি তার সদুত্তর দিতে পারেননি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য।
দক্ষিণ দিনাজপুরকে নির্মল জেলা করার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। জেলার ৬৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের সংসদগুলিকে সরকারিভাবে নির্মল ঘোষণা করা হয়েছে। বালুরঘাট ব্লকের ১০ নম্বর অমৃতখণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েতের ডুমইর ও চকামদ সংসদকে বছরখানেক আগে নির্মল গ্রাম সংসদের তকমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই দুই সংসদকে নির্মল ঘোষণা করা হলেও, ২টি গ্রাম মিলিয়ে মাত্র ৬-৭টি বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে। গ্রামের বাকি প্রায় ৯৭ শতাংশ বাসিন্দার শৌচকর্ম করতে মাঠই ভরসা এখনও।
বালুরঘাট শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে ডুমইর ও চকামদ গ্রাম। এই গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী ও দিনমজুর। তাঁরা সরকারি সাহায্যে শৌচালয় বানানোর জন্য বছর দুয়েক আগে ৯০০ টাকা করে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দিয়েছিল। কিন্তু, বছর যেতে না যেতেই সেই সংস্থা গ্রামবাসীদের টাকা ফেরত দেয়। বছরখানেক আগে ফের একবার ওয়েস্ট দিনাজপুর আদিবাসী রিক্রিয়েশন ক্লাবকে ৯০০ টাকা করে দিয়েছিলেন গ্রামের বাসিন্দারা। দুটি সংসদ মিলিয়ে ১০০-র বেশি পরিবার শৌচালয় বানানোর জন্য টাকা দিয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে ডুমইর গ্রামের মাত্র তিনজন ও চকামদ গ্রামের চারজনকে শৌচালয় বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকিদের জন্য এখনও শৌচালয় তৈরি হয়নি।
এই দু’টি গ্রামের ১০০-র বেশি পরিবার সরকারি শৌচালয় পাওয়ার জন্য বছর দুয়েক আগে ৯০০ টাকা করে দিয়েছিল। শৌচালয় না পাওয়ার বিষয়টি তারা স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে প্রশাসনকে বহুবার জানিয়েছে। কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ গ্রামবাসীদের।
জেলা প্রশাসন এই দু’টি সংসদকে অনেক আগেই নির্মল সংসদ ঘোষণা করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা প্রশ্ন তোলেন, যে গ্রামের ৯৭ শতাংশ বাড়িতে কোনও শৌচালয় নেই, সেই গ্রামকে কীভাবে প্রশাসন নির্মল গ্রাম ঘোষণা করতে পারে?
ওই এলাকায় স্থানীয় পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়, বাড়িতে শৌচালয় না থাকলে আর রেশন মিলবে না। দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের কাছে রেশন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রেশন যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য বাড়িতে শৌচালয় আছে বলে মিথ্যা তথ্য প্রশাসনকে জানাতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। এদিকে টাকা দেওয়ার পরও গ্রামবাসীরা কেন শৌচালয় পেলেন না তা জানা নেই বলে দাবি করেছে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্যামলী মণ্ডল জানান, তাঁদের বাড়িতে শৌচালয় নেই। সরকারি সহযোগিতায় শৌচালয় পাওয়ার জন্য তাঁরা অনেক আগেই টাকা দিয়েছেন। কিন্তু শৌচালয় এখনও পাননি। এদিকে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও পঞ্চায়েতের অন্য কর্মীরা এসে বলে গিয়েছে, বাড়িতে শৌচালয় না থাকলে আর রেশন পাওয়া যাবে না। শৌচালয় কার্ড থাকলেই মিলবে রেশন কার্ড। রেশন পাওয়ার জন্য এখন তাঁদের পঞ্চায়েত কর্মীদের কাছে মিথ্যা বলতে হচ্ছে।
গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অজিত বর্মণ বলেন, গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িতেই এখনও শৌচালয় নেই। বেশিরভাগ গ্রামবাসী শৌচালয় পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, তাঁদের এখনও দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হচ্ছে না তা জানি না। শৌচালয় না থাকলে রেশন দেওয়া হবে কি না জানা নেই।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।