ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: নয়নয় করেও এই পল্লীতে প্রায় ৯০টি পরিবারের বসবাস। রয়েছে প্রায় ১৫০জন পড়ুয়া ছেলেমেয়েও। ভোটের কার্ড থেকে আধার কার্ড সবই রয়েছে তাঁদের। কিন্তু নেই কেবল একটা আস্ত পাড়ায় ঢোকার কিংবা বেরোনোর কোনো রাস্তা। তাই বাধ্য হয়েই সরকারী পাঁচিলের গায়ে মই লাগিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে গত প্রায় কয়েক বছর ধরে। অথচ বর্ধমান সদর ২নং ব্লকের বৈকুণ্ঠপুর ১নং গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন বাম রবীন্দ্রপল্লী এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক স্তরে জানিয়ে আসছেন তাঁদের রাস্তার জন্য। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। অবশেষে শুক্রবার বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি গোটা বিষয়টি জেনে এই এলাকার মানুষের আবেদন মেনে তাঁদের রাস্তা তৈরী করে দেবার উদ্যোগ নিলেন।
বাম রবীন্দ্রপল্লী এলাকার বাসিন্দা ভরত রায়, অঞ্জলী দাস, তাপস বিশ্বাস প্রমুখরা জানিয়েছেন, বর্ধমান জেলা পরিষদের অধীন উল্লাস উপনগরীর পিছনে সরকারী খাস জমির ওপর এই নতুন বসতি গড়ে উঠেছে প্রায় ১৫ বছর। বসতি স্থাপনের সময় জমির দালাল থেকে রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের রাস্তা হিসাবে উল্লাস উপনগরীর ২নং গেটের রাস্তাকেই দেখিয়েছিলেন। সেই সময় উল্লাস উপনগরীর এলাকা প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল না। ছিল কাঁটাতারের বেরা। তাঁরা সেই কাঁটাতারের বেড়া টপকেই যাতায়াত শুরু করেছিলেন। কথা ছিল তাদের রাস্তা তৈরী করে দেওয়া হবে। তাঁরা জানিয়েছেন, গত কয়েকবছর আগে হটাৎই উপনগরীর এলাকাকে প্রাচীর দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। কার্যত রাস্তা না থাকায় তাঁরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তাই প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতেই তৈরী করা হয় মই। সেই মই দিয়েই তাঁরা যাতায়াত করছেন।
অঞ্জলী দাস জানিয়েছেন, ৬বছর আগে তাঁর ৭ বছরের নাতি কৃষ্ণ দাস ওই কাঁটাতারের বেরা টপকে যেতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। তার মৃতদেহও ওই কাঁটাতারের বেরা টপকেই নিয়ে আসতে হয়েছিল। ভরতবাবুরা জানিয়েছেন, এই পল্লীর ছেলেমেয়েরা কেউ পুলিশ লাইন স্কুল, কেউ বিদ্যার্থী বয়েজ ও গার্লস, কেউ ৩নং ইছলাবাদ স্কুল, মুচিপাড়া স্কুল, রায়ননগর স্কুলে পড়ে। তাদের আলপথ ধরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় সারাবছর। তীব্র সমস্যা দেখা দেয় বর্ষাকালে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক হাঁটু জল পেড়িয়ে যেতে হয়। ইতিমধ্যেই ২জনকে সাপেও কামড়িয়েছে। ফলে সমস্যা হলেও তারা মই বেয়ে প্রাচীর টপকেই যাতায়াত করতে বাধ্য হন। এব্যাপারে স্থানীয় পঞ্চায়েত সহ সমস্ত স্তরেই জানিয়েছেন তাঁদের রাস্তার জন্য। বৃহস্পতিবার তাঁরা জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডুর সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা জানান।
সভাধিপতি গোটা বিষয়টি পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলামকে দেখার নির্দেশ দেন। শুক্রবার সকালে জেলা পরিষদের সাব এ্যাসিস্ট্যাণ্ট ইঞ্জিনিয়ার গোটা এলাকা পরিদর্শন করেন। বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, ইঞ্জিনিয়ার রিপোর্ট দেবার পরই তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিভাবে কি করা যায় তা তাঁরা খতিয়ে দেখছেন।