ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করল বর্ধমান প্রেস ক্লাব। শহীদ দিবস উপলক্ষে বর্ধমানের কার্জন গেট চত্বরে 'অমর একুশে' শীর্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু। এদিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি দেবু টুডু সাইকেলে চড়ে এসে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সভাধিপতি বলেন,বাংলা ভাষার জন্য একটি রাষ্ট্র তৈরী হয়েছিল। এমন নজির আর নেই। বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। এই ভাষার কৌলিন্য রক্ষা করার দায়িত্ত্ব আমাদের সকলের। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জেলা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক কুশল চক্রবর্তী। কুশলবাবু বলেন,রাজ্য সরকারের তরফে এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় সর্বত্র পালন করা হচ্ছে। তবে বর্ধমান প্রেস ক্লাব শহরের প্রাণকেন্দ্রে সকাল সকাল যে ভাবে '২১শে ফ্রেব্রুয়ারি 'উদযাপন করল তা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ তনভীর নাসরিন এবং আধিকারিক ইন্দ্রজিৎ রায়।
২১শে ফ্রেব্রুয়ারি প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। শহীদ দিবসের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবেও দিনটি পরিচিত। ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারি (বাংলা ৮ফাল্গুন,১৩৫৯) বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর পুলিশের গুলি বর্ষণে কয়েকজন তরুণ শহীদ হন। শহীদ হন আব্দুল জব্বার,রফিকউদ্দিন আহমেদ,আব্দুল সালাম ও আবুল বরকত। শহীদদের মধ্যে একমাত্র বরকতই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ ক্লাসের ছাত্র। বাকিরা সব অন্য পেসার মানুষ। ১৯৫২ থেকে ১৯৭১। পূর্ব পাকিস্তান হল বাংলাদেশ। রাষ্ট্রভাষা বাংলা। ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ রাষ্ট্রসংঘের কাছে এক আবেদনপত্রে ২১ ফ্রেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির দাবি তোলা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭নভেম্বর সকল রাষ্ট্রের সম্মতিক্রমে ২১ফ্রেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০০ সালের ২১ফ্রেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে পালিত হয়।
বর্ধমান প্রেস ক্লাবের অমর একুশে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তারা দিনটির তাৎপর্য এবং বাংলা ভাষার দিক বদল নিয়ে মনোজ্ঞ বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের সভাপতি গনেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বলেন,বর্ধমান প্রেস ক্লাব সারা বছরই নানা কর্মসূচি নিয়ে থাকে। সাংবাদিকতা পরিমণ্ডলের বাইরে যে বৃহত্তর সামাজিক পরিমণ্ডল রয়েছে তাতেও এই সংগঠন নানা অবদান রাখার চেষ্টা করছে।
সংগঠনের সম্পাদক ঋষিগোপাল মন্ডল বলেন,ইংরাজি ও হিন্দি ভাষার আগ্রাসনে বাংলা ভাষা ক্রমশ কোনঠাসা হচ্ছে। এই আগ্রাসন রোধ করতে না পারলে মুশকিল। এই সংগঠনের সাংবাদিকরা বাংলা ভাষাতেই সাংবাদিকতা করেন।ফলে,এই ভাষার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাও রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই অমর একুশে অনুষ্ঠানের উদ্যোগ। বর্ধমান প্রেস ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল রহমান বলেন,বাংলা ভাষা নিয়ে আমাদের রোজকার কাজকর্ম,তাই 'একুশে ফ্রেব্রুয়ারি' আমাদের তরফে ভাষা শহীদদের প্রতি জানান হল সামান্য শ্রদ্ধার্ঘ।
এদিনের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন 'ছন্দম' এর শিল্পীরা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ইন্টার ন্যাশনাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন 'এর সভাপতি এবং বাংলাদেশি ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন,বাংলাদেশে 'একুশে ফ্রেব্রুয়ারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। সীমান্তের এপারে বর্ধমানের প্রাণকেন্দ্রে বর্ধমান প্রেস ক্লাবের এই আন্তরিক অনুষ্ঠানে এসে নিজের দেশের 'একুশের স্মৃতি 'তাজা হল।
ছবি - সুরজ প্রসাদ