
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান:আগামী ৩০ ডিসেম্বর থেকে রবিচাষে এবং ৩০ জানুয়ারী থেকে চার জেলায় বোরো চাষে জল দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। বৃহস্পতিবার বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি জানান, সম্প্রতি বর্ধমান বিভাগের কমিশনারের নির্দেশে চাষের জল দেবার বিষয়ে একটি ডেভেলপমেণ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিন বর্ধমান জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ দপ্তরের স্থায়ী সমিতির বৈঠকে সভাধিপতি দেবু টুডু, দামোদর ক্যানেল ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ চক্রবর্তী, জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ পরেশ পাল, জেলা কৃষি দপ্তরের যুগ্ম কৃষি আধিকারিক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় সহ কৃষি সেচ দপ্তরের আধিকারিকরাও হাজির ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবছর রবি চাষে ৩০ ডিসেম্বর থেকে জল ছাড়া হবে। এবছর বর্ধমান জেলায় ২০ হাজার একর এবং হুগলী জেলায় ৩০ হাজার একরে রবি হচ্ছে। এজন্য ৭০ হাজার একর ফিট জল দেওয়া হবে এই দুই জেলায়। অন্যদিকে, ৩০ জানুয়ারী থেকে বোরো চাষে জল দেওয়া হবে বর্ধমান, হুগলী, বাঁকুড়া ও হাওড়া জেলার মোট ১ লক্ষ ৪৪ হাজার একর জমির জন্য ৪ লক্ষ ৩৩ হাজার একর ফিট। বর্ধমান জেলায় ১০টি ব্লকের মোট ৯০ হাজার একর চাষের জন্য দেওয়া হবে ২ লক্ষ ৭০ হাজার একর ফিট জল।
জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ স্থায়ী সমিতির সদস্য নুরুল হাসান জানিয়েছেন, ২০ বছর পর বর্ধমান ১ ব্লকের বাঘাড় ১ ও ২ নং অঞ্চলে বোরো চাষে এবার জল দেওয়া হবে। বিগত বাম আমল থেকেই এই দুটি অঞ্চলকে বোরো চাষে জল দেবার ক্ষেত্রে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছিল। ফলে প্রায় ৭ হাজার একর চাষের জমি এই অঞ্চলে দামোদর সেচের জল পাচ্ছিল না। এবছর তা পাওয়ার ঘোষণায় খুশি এলাকার চাষি মহলে।
সভাধিপতি জানিয়েছেন, গতবছর যে সমস্ত ব্লকে জল দেওয়া হয়েছিল এবার রোটেশানে সেগুলিকে বাদ দিয়ে অন্য ব্লকে জল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও যদি কোনো এলাকায় জলের অভাবে চাষ ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে সেই সমস্ত এলাকায় বোরো চাষে জল দেবার বিষয়ে তাঁরা আলোচনা করে সেই সমস্ত ব্লকে জল দেওয়া যাবে কিনা তা দেখবেন। তিনি জানান, এবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার ফরিদপুর-দুর্গাপুর, কাঁকসা এবং পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান ১ ও ২, আউশগ্রাম ২, মেমারী ১, জামালপুর, গলসী ১ ও ২ এবং কালনা ২ ব্লকে জল দেওয়া হবে। জল দেওয়া হবে এলবিএমসি, ওল্ড ডিএমসি, পানাগড় ব্রাঞ্চ ক্যানেল, ১ বিসি, ফিডার, ডিএমসি, ৬এমসি, নতুন গাঙ্গুর, বেহুলা, ইডেন, কানা দামোদর, ব্রাঞ্চ ১ ও ব্রাঞ্চ ২ ক্যানেলের মাধ্যমে এই জল দেওয়া হবে। এই জলে কাঁকসা ব্লকের ১৪৯৯ একর, দুর্গাপুর ফরিদপুরের ১৫৬ একর, গলসী ১ এর ১৫৫৫৬ একর, গলসী ২ এর ১৪৩৯৯ একর, বর্ধমান ১ এর ২০৭৪০ একর, বর্ধমান ২ এর ৫৭৭৪ একর, আউশগ্রাম-২ এর ১১৭৭১ একর, মেমারী ১এর ১০০৭৯ একর জামালপুরের ৭৭৭১ একর এবং কালনা -২ এর ১৫০০ একর জমিতে বোরো চাষ করা যাবে।
উল্লেখ্য, দামোদরের এই জলে বোরো মরশুমে হুগলী জেলার ধনেখালি, বলাগড়, পাণ্ডুয়া, খানাকুল ১ ও ২ এবং তারকেশ্বর সহ ৬টি ব্লকে ৩০ হাজার ৫০০ একর এলাকায় চাষ হবে। বাঁকুড়ার বরজোড়া, সোনামুখী, পাত্রসায়র ও ইন্দাস সহ ৪টি ব্লকের ২০ হাজার একর এবং হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা-২ এই ২টি ব্লকে ৩৫০০ একর এলাকায় বোরো চাষ হবে।
এদিন বৈঠক শেষে, দামোদর ক্যানেল ডিভিশনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ চক্রবর্তী জানান, সম্প্রতি দুর্গাপুরে দামোদর ব্যারেজ লকগেট ভেঙে যে জল বেড়িয়ে যায় তা মোট সঞ্চিত জলের মাত্র ৪ শতাংশ। এর ফলে বোরো বা রবি চাষে জল দেবার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যাই দেখা দেবে না।
