
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: চিকিৎসার গাফিলতিতে শিশু মৃত্যুর অভিযোগে সোমবার দুপুরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিলো বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বর। মৃত শিশুটির পরিবারের লোকজন হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে ঢুকে বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক গণেশচন্দ্র গাইন, জুনিয়র ডাক্তার তন্ময় মণ্ডল সহ ৫জন ডাক্তার, কর্তব্যরত নার্স ও হাসপাতাল কর্মীদের বেধড়ক মারধোর করেন। ভাঙচুর চালানো হয় এই বিভাগে।আচমকা এই হামলায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে হাসপাতাল জুড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্প থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। খবর পেয়ে বর্ধমান থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির হয়। ডাক্তারদের মারধোর ও ভাঙচুর করার ঘটনায় মৃত শিশুর বাবা হাসিবুল সেখ, কাকা মফিজুল সেখ, আত্মীয় লাল্টু সেখ এবং একটি গাড়ির চালক সহ মোট ৪জনকে আটক করে পুলিশ।
এদিকে এই ঘটনার পরই কর্তব্যরত জুনিয়র ডাক্তাররা তাঁদের নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সহ সমস্ত বিভাগ,এমনকি আউটডোরেও কর্মবিরতি শুরু করে দেন। এমনকি সুপারের অফিস ঘেরাও করে তাঁকে তালা বন্ধ করে দেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গেছে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি জারি রয়েছে। একদিকে রোগীর পরিবারের লোকেদের ছোটাছুটি,ডাক্তারদের মারধর, অন্যদিকে আশঙ্কাজনক রোগীদের ভর্তি করতে আসা রোগীর পরিজনেদের আতঙ্কিত হয়ে দৌড়াদৌড়িতে কার্যত এদিন লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিষেবা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে,গত সোমবার সন্ধ্যায় মন্তেশ্বর থানার আকবরপুর এলাকার বাসিন্দা হাসিবুল মণ্ডল তাঁদের ইশান মণ্ডল নামে ৩ বছর ৭ মাস বয়সের শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করে।গত শনিবার ভুল করে শিশুটি জামার হুক খেয়ে ফেলে। এরপর তাকে বর্ধমানের এক বেসরকারী চিকিৎসক আমিনুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা করে ছেড়েও দেন। কিন্তু সোমবার থেকে শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ইএনটি বিভাগে ভর্তির পর ওই শিশুটির জরুরি ভিত্তিতে অপারেশন করা হয়।
নাসিরা বিবি জানিয়েছেন, রাত্রি প্রায় পৌনে ১২টা নাগাদ মাইকে ঘোষণা করা হয় শিশুটি মারা গেছে। তিনি জানান, অপারেশনের নাম করে শিশুটির কার্যত গলা কেটে দেওয়া হয়েছে। এরপর যথারীতি তারা মৃত শিশুটিকে নিয়ে বাড়ি চলে যান। তাকে কবরও দেওয়া হয়। এরপর তিনদিন কেটে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা নাগাদ রীতিমতো কয়েকটি গাড়ি করে লোকজন নিয়ে এসে হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে ঢুকে কর্তব্যরত ডাক্তার,নার্স ও কর্মীদের বেধড়ক মারধর করে। ভাঙচুর করে জিনিসপত্র। এই ঘটনায় পুলিশ ৪জনকে গ্রেফতার করেছে।
মৃত শিশুর দাদু সাত্তার সেখ অভিযোগ করেছেন, সুপারের ঘরের মধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভের মাঝেই ওই তাঁদের পরিবারের ৪জনকে নিয়ে পুলিশ সেখানে নিয়ে ঢোকে। এরপরই পুলিশের সামনে ঘরের দরজা বন্ধ করে জুনিয়র ডাক্তাররা ওই ৪জন অভিযুক্তকে বেধড়ক মারধোর করে বলে অভিযোগ।
বর্ধমান হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, ওই শিশুটিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। শিশুর শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই দ্রুত নিয়ম ভেঙ্গেই তার অপারেশন করে সুস্থতার চেষ্টাও করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি জানান, এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের ৪জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।
ছবি - সুরজ প্রসাদ
