অদিতি চট্টোপাধ্যায় :নভেম্বরের মাঝামাঝিতে এসে জানান দিচ্ছে যে শীত আসন্ন।আবহাওয়া দপ্তরও আশার বাণী শুনিয়েছে যে নিম্নচাপের প্রভাব কেটে গেলেই বঙ্গে শীত পড়বে। আর শীত কাতুরে বাঙালি তাই কিছুটা আগেই বছরভর আলমমারী,স্যুটকেসে বন্দি থাকা গরম কাপড় বের করে ছাদের রোদে সেঁকে নিচ্ছে। ভোর বেলায় আর সন্ধ্যায় ইতিমধ্যেই শরীর সচেতন অনেকে গলায় মাফলার,মাথায় টুপি,গায়ে হালকা গরম কাপড় চড়ানো শুরুও করে দিয়েছে।
আসলে শীত আসা মানেই রঙিন জামা কাপড়ের বাহার।আধুনিক হাল ফ্যাশনের যুগে আজ সোয়েটার,চাদর কিছুটা হলেও ব্যাকডেটেড।
পরিবর্তে নামি দামি কোম্পানির শপিং মল আর শোরুমের দৌলতে রেডিমেড জ্যাকেট,উইন্টচিটার পুলওভার,ব্লেজার,কোটের রমরমাই বেশি। এখন আর ২০ বছর আগে মায়ের হাতে আদর যত্নে তৈরী করা সেই হাফ হাতা,ফুলহাতা সোয়েটার সন্তানদের পছন্দ নয়। তারা রেডিমেডেই বিশ্বাসী। এখনকার মায়েদের কথা তো বলাই যাবে না। কারণ তাঁরা তো জানেনই না উলের প্রকারভেদ কয় প্রকার অথবা সোয়েটার বানাতে গেলে কত রকমের কাঁটা আর কুরুস ব্যবহার করতে হয়।
একসময় দিনের পর দিন,মাসের পর মাস - বলতে গেলে প্রায় সারা বছর ধরেই বাড়ির মা বোনেরা হাতে উল,কাঁটা নিয়ে বসে থাকতো। পাশের বাড়ির কাকিমার সঙ্গে বাংলা সিরিয়াল দেখতে দেখতে কখন যে ডানদিকের হাতটা বোনা শেষ হয়ে যেত কেউ টের পেতো না। বাবারটা শেষ হলেই শুরু হয়ে যেত ভাইয়েরটা। তখন স্কুলগুলোতেও রীতিমতো উলের নানা রকম পোশাক বানানোর টাস্ক দিতো ছাত্রীদের। সেই নিয়েও ছিল প্রতিযোগিতা। বাজারের আনাচে কানাচে দোকানগুলোতে সারা বছর কিনতে পাওয়া যেত ফোর প্লাই,সিক্স প্লাই থেকে টেন প্লাই কত রকমের রঙিন উল। পাওয়া যেত চার নম্বর থেকে চোদ্দ নম্বর বিভিন্ন ধরণের সোয়েটার বোনের কাঁটা।
এখনকার প্রজন্ম তো এসব প্রায় জানেই না। মা, বোন,দিদিদের হাতে বহুদিনের কসরতে তৈরী করা সেই গরম কাপড় পড়ার আনন্দ আর আবেগ আজ তাই উধাও।
ভুটানিরাও আর আসেনা। সেই লাইন দিয়ে ফুটপাথের রেলিংয়ে নানা রঙের সোয়েটার,টুপি,মাফলার,চাদর আর সেভাবে দেখতে পাওয়া যায় না। কেনই বা আসবে? কেনার লোক কোথায়?
হয়তো এটাই স্বাভাবিক। আধুনিকতার সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে তাল মিলিয়ে চলতে হবে তো !
তবু শীত আসবে,এসে চলেও যাবে।
।