ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,সোনামুখী: কালীপুজোয় মেতে উঠেছে সোনামুখী। দক্ষিনবঙ্গে কালীপুজোর শহর হিসাবে পরিচিত বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী। এখানকার কালী পূজা ঐতিহ্যে, নামে, সংখ্যায়, আকার আয়তনে ব্যাতিক্রমী। এখানে প্রথম সারির পূজাই হয় প্রায় ৩০টি। এখানকার কালীর নামের বৈচিত্র্য উল্লেখ করার মতো। বড়কালী, মাইত কালী, হট্টনগর কালী, সার্ভিস কালী, পায়রা কালী, ঘুঘু কালী,কৃষ্ণ কালী,সত্য কালী,দক্ষিণা কালী,চামুন্ডা কালী,তেমাথা কালী, দক্ষিনখন্ড কালী, ভদ্র কালী, চামুন্ডা কালী ইত্যাদি।
উচ্চতায় শহরের সব থেকে বড় হয় বড়কালী। সেই কারনে জায়গাটির নামও হয়ে গেছে বড়কালীতলা। দ্বিতীয় উচ্চতার কালীপ্রতিমা হল মাইত কালী।
উচ্চতায় শহরের সব থেকে বড় হয় বড়কালী। সেই কারনে জায়গাটির নামও হয়ে গেছে বড়কালীতলা। দ্বিতীয় উচ্চতার কালীপ্রতিমা হল মাইত কালী।
সোনামুখী শহরের উল্লেখযোগ্য পূজাগুলির অন্যতম ৪৫০ বছরের পুরানো হটনগর কালীপূজা। এই পূজা ঘিরেও রয়েছে কাহিনী। সোনামুখী শহরের তারিণী সূত্রধর চিঁড়ে বিক্রি করতে ঝুড়ি মাথায় করে যেতেন নিরসা সহ বিভিন্ন গ্রামে। চিঁড়ে বিক্রি করে ফেরার পথে একটি ঝোপের ধারে বসে একটু জিরিয়ে নিতেন আর কিছু খেতেন। প্রায় প্রতিদিন লালপাড় সাদা শাড়ি পরা একটি মেয়ে সেই সময় এসে তাকে সোনামুখী নিয়ে আসার জন্য জেদ ধরত। একদিন জোর করেই মেয়েটি তারিণী দেবীর ঝুড়িতে উঠে বসে। তারিণী বাড়িতে এসে দেখেন যে ঝুড়িতে মেয়েটি নেই। তার পরিবর্তে একটি পাথর টুকরো দেখতে পান। তিনি সেই পাথর টুকরোটি তুলসি তলায় রেখে দেন। সেই রাতেই মেয়েটি দেবী কালী রূপে স্বপ্ন দিয়ে একটি আকড় গাছের তলায় পূজা করতে বলেন।একই স্বপ্ন দেখেন স্থানীয় তৎকালীন জমিদারের স্ত্রী কাদম্বনীদেবী। কিন্তু দেবী নিরসা থেকে তারিনী সূত্রধরের মাথায় চড়ে সোনামুখী আসায় কোন পুরোহিত পূজা করতে সম্মত হননি।এরপর কাদম্বনীদেবী স্থানীয় ষোলো আনার হাতে দায়িত্ব তুলে দেন পুজোর। হটাৎ করে দেবীর আসার কারনে অথবা যে জায়গায় মন্দির হয়েছে সেখানে হট্টযোগী ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, সম্ভবত হট্টযোগীর নাম থেকেই সেই জায়গার নাম হয়েছে হটনগর।বর্তমানে দেবীর স্থায়ী মন্দির রয়েছে এখানে।এখানে এখনও সূত্রধর সম্প্রদায়ের মাথায় চড়ে ঘট আসে এবং তারাই প্রতিমা গড়েন।
সোনামুখীয় মাইত কালীর নাম বিখ্যাত। এই পূজা ঘিরে রয়েছে ব্যাপক উন্মাদনা। পূজার দিন প্রায় ২৫০ ছাগলবলি হয় । এখানে প্রতিমা তৈরী করেন সূত্রধররা, মাকে গহনা পরান মেটেরা, মাকে সাজান মালাকাররা ,মায়ের হাতে খড়্গ দেন কর্মকাররা এবং পূজা করেন ব্রাহ্মনরা। সোনামুখীর বসবাসকারী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ মিলিত ভাবে এই পূজায় সামিল হন।
মাইত কালীকে ঘিরেও রয়েছে কাহিনী। ১৭৪২ খ্রীষ্টাব্দে মারাঠা সেনাপতি ভাস্কর পন্ডিত বর্গীদের নিয়ে বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী আসে লুটপাট করার জন্য। 'হর হর বোম বোম' শব্দ করতে করতে রাণীর বাজারে মা কালীর মন্দিরের সামনে বর্গীদল সমবেত হয়েছিল। তখন মন্দিদের চারদিক গাছপালায় এমন ভর্তি ছিল যে দিনের বেলাতেই অনেকে মন্দিরের সামনে যেতে ভয় করতেন। বর্গীদের আসার পর ভয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের ঘর বন্ধ করে রাখলেন। এক বৃদ্ধ সন্ধ্যায় দেবীমন্দিরে প্রদীপ দিয়ে বলিস্থানে হাড়িকাঠে প্রনাম করছিলেন। সেইসময় বর্গীদলের সর্দার একটি খাঁড়া উঠিয়ে প্রনামরত বৃদ্ধকে বলি দিতে গিয়েছিলেন। কথিত আছে ,সর্দার খাঁড়াটি নামাতেই পারেন নি । তার মনে হয়েছিল ,যেন পেছন থেকে কেউ তাকে টেনে রেখেছে। পিছনের দিকে ঘুরে তিনি দেখেন যে এক মহিলা খড়্গটিকে টেনে রেখেছে। বৃদ্ধাটি বলেন, এই ত মা কালী। মাইত কালী। সেই থেকে নাম হয় মাইত কালী।

