ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: চিকিৎসক, নার্স সহ চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত সকলের এবং রোগী ও রোগীর পরিবার পরিজন সহ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা অগুনিত মানুষদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে বছরখানেক আগে গোটা হাসপাতাল চত্বর কে সিসি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে। সমস্ত গুরুত্বপূর্ন বিভাগ সহ হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ১৩৯টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল।
পাশপাশি সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে যেকোনো সমস্যায় হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে জানানোর পর মাইকিং করে হাসপাতালের বিভিন্ন প্রান্তে কর্তব্যরত সিভিক বা অন্য কর্মীদের সতর্ক করে দেওয়ার জন্য মাইকে এনাউন্স করার ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল ইমারজেন্সি লাগোয়া পুলিশ ক্যাম্প থেকে। এই ব্যবস্থায় কাজও হচ্ছিল বলে হাসপাতাল সূত্রেই জানা গেছে। এমনকি কর্তব্যরত পুলিশ অনেক ক্ষেত্রেই দ্রুত সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারছিলেন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে। পুলিশ ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসে হারিয়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে অনেকের জিনিসপত্র, টাকার ব্যাগ চুরি করে পালানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। এসমস্ত ক্ষেত্রে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে এসে অভিযোগ করার সাথেই মাইকে ঘোষণা করে সকলকে সতর্ক করে দেওয়া যেতো। তবে এই ব্যবস্থা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে দুপক্ষেরই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত পাঁচ-ছ মাস যাবৎ বর্ধমান হাসপাতালের একদিকে যেমন বেশিরভাগ সিসি ক্যামেরা, পাশাপাশি পুলিশের ব্যবহারের মাইকিং ব্যবস্থাও কার্যত অচল হয়ে পড়ে আছে। আর এর ফলে যেমন ছোট বড় অপরাধের মতো ঘটনা আকছার ঘটছে হাসপাতাল চত্বরে, তেমনি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা দূরদুরান্তের মানুষ কে নানান সমস্যায় পড়ে পুলিশের কাছে গিয়েও অনেক সময় কখনো দীর্ঘক্ষণ সমাধানের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে অথবা কিছু ক্ষেত্রে শেষমেষ অভিযোগ জানাতে হচ্ছে পুলিশ কে।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তা সম্মন্ধীয় এই বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতির জন্য একপ্রকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন একাধিক রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা। অনেকেই জানিয়েছেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবেই গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার এই বেহাল দশা। যদিও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডাঃ কুনাল কান্তি দে জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই বিকল সিসি ক্যামেরা এবং অচল মাইকিং ব্যবস্থা কে নতুন করে সারিয়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, এই দুটো ব্যবস্থাই অন্ত্যন্ত জরুরি। মাস কয়েক আগে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্বে থাকা এজেন্সির টালবাহানায় কিছুদিন এইগুলো খারাপ হয়ে রয়েছে। তবে অতি দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে। পুলিশ সূত্রেও জানা গেছে, খুব শীঘ্রই ফের চালু হয়ে যাচ্ছে পুলিশের ক্যাম্প থেকে মাইকিং ব্যবস্থা।
স্বাভাবিকভাবেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো অতি ব্যস্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পরিষেবার জায়গায় যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসা যাওয়া করছেন সেখানে দীর্ঘদিন ধরে সিসি ক্যামেরা এবং প্রয়োজনীয় বার্তা মাইকের মাধ্যমে প্রচার করার ব্যবস্থা অচল এবং বিকল থাকায় রীতিমত উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সর্বস্তরের মানুষ। উল্লেখ্য, রোগী নিয়ে অন্য কোন জেলা থেকে এখানে এসে অনেককেই নানান ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কারুর ছেলে হারিয়ে যায় তো কারুর স্বামী,বউ। আবার চুরি, ছিনতাই এর ঘটনাও হাসপাতালের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার।
আর তখন শেষমেষ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের শরণাপন্ন হয় ভুক্তভুগীরা। জানা গেছে, যে কোনো ধরনের সমস্যা ক্যাম্পে আসলেই দ্রুত এই সমস্যা মেটানোর জন্য এই মাইকিং ব্যবস্থাই ছিল পুলিশের তুরুপের তাস। আর সেই ব্যবস্থাই একেবারে বন্ধ হয়ে পরে থাকায় রীতিমত গুটিকয়েক সিভিক এবং পুলিশ কর্মী নিয়ে কার্যত নাকানি চোবানি খাচ্ছে বর্ধমান থানা নিযুক্ত হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীরা।