ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনার প্রকোপ প্রতিদিনই পূর্ব বর্ধমান জেলায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে জেলা প্রশাসন নানাভাবেই বিধি নিষেধ জারী করেই চলেছেন। যার মধ্যে বাজার দোকান বন্ধ ও খোলার কিছু নিয়ম ছাড়াও করোনার জেরে জেলায় সমস্ত রকম সভা, সমিতি, মিছিল, মিটিং, ধর্মীয় সমাবেশ সব কিছুই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত গোটা জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৯৫তে। যার মধ্যে মারা গেছেন ৪০ জন। কেবলমাত্র সোমবারই জেলায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩জন।
আর করোনা নিয়ে যখন গোটা জেলায় আতংক তীব্রতর সেই সময় রীতিমত করোনা সংক্রান্ত বিধি নিষেধকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চে রবিবার বিশাল সমাবেশ করল পূর্ব বর্ধমান জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেস। আর বিশাল এই সমাবেশকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিশাল চাপান উতোরও। শুধু তাই নয়, কিভাবে এবং কার অনুমতিতে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে এই সভা করা হল তা নিয়ে জেলা যুব কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সোমবার জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি গৌরব সমাদ্দার।
এদিন জেলাশাসককে দেওয়া অভিযোগে গৌরববাবু সরাসরি জানিয়েছেন, খোদ জেলাশাসকই জানিয়েছেন বর্ধমান শহর তথা পৌর এলাকায় করোনার গোষ্টী সংক্রমণ চলছে। এমতবস্থায় খোদ শহরের বুকে সংস্কৃতি লোকমঞ্চে কিভাবে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল যুব কংগ্রেস এই সমাবেশ করল। এর ফলে করোনা সংক্রমণ যে আরও বাড়বে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? কে এর দায়িত্ব বহন করবে? এদিন গৌরববাবু জানিয়েছেন, রবিবার সংস্কৃতি লোকমঞ্চে জেলা যুব তৃণমূলের উদ্যোগে ইউথ ইন পলিটিক্স নামে একটি ও অনুষ্ঠান ছিলো। এই অনুষ্ঠানে প্রায় ১৬০০ যুবক উপস্থিত হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান সংস্কৃতি লোকমঞ্চের আসন সংখ্যা প্রায় ১৬০০। ফলে গোটা সংস্কৃতি লোকমঞ্চই ছিল কানায় কানায় ভর্তি।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, কেন সংস্কৃতি কর্তৃপক্ষ এই সমাবেশের জন্য হল ভাড়া দিলেন ? এদিন তিনি জেলাশাসকের কাছে এব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণেরও আর্জি জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, রবিবার সংস্কৃতি লোকমঞ্চে সাধারণ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকে ৬২৫জনকে তৃণমূল যুব সংগঠনে যুক্ত করা হয়। জানা গেছে, এই অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক ছিল তৃণমূলের থিং ট্যাঙ্ক পিকের টিম। প্রশ্ন উঠেছে, গোটা দেশ জুড়়ে যখন করোনার মহামারি চলছে। সামাজিক দূরত্ববিধি মানার জন্য প্রতিনিয়তই প্রচার, চেষ্টা চলছে। লোক জমায়েত ঠেকাতে বাজার দোকান খোলা বন্ধের জন্য প্রশাসন মাঝে মধ্যেই নিয়ম চালু করছেন – সেখানে কিভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় এই সমাবেশ করা হল?
এব্যাপারে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি তথা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সমন্বয় কমিটির সদস্য দেবু টুডু স্বীকার করেছেন, রবিবারের সমাবেশে এত জমায়েত হওয়া ঠিক হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্য থেকে যে তালিকা পাঠানো হয়েছিল তাতে মাত্র ৬২৫জন যুবকে দলে নেবার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল রীতিমত প্রচুর যুব ঢুকে পড়েছে। এদিন তা নিয়ে তিনি আলোচনাও করেছেন।
পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীক স্বার্থে জেলা পরিষদের অধীনে থাকা সংস্কৃতি লোকমঞ্চ এবং জেলা পরিষদের অঙ্গীকার হলকে ভাড়া দেওয়া হয়। চলতি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভাড়া দেবার ক্ষেত্রে করোনা বিধি মানার জন্য বলা হয়েছিল। দেবু টুডু জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যাতে এই ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে দলীয়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, সংস্কৃতি লোকমঞ্চকে স্যানিটাইজ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, রবিবারই বর্ধমানের বিডিএ হলে ৬০জন আধিকারিকের উপস্থিতিতে বৈঠক করেছেন জেলাশাসক। সোমবার থেকে বিডিএ হলকেও পুরোপুরি স্যানিটাইজ করা হয়েছে।