ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: করোনা আবহের জেরে এবার বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজোকে ঘিরেও চরম দুশ্চিন্তা দেখা দিল। এমনিতেই এবছর সার্বজনীন বারোয়ারী দুর্গাপুজোকে ঘিরে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিগ বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারাও নমো নমো করে চাঁদাবিহীন পুজো সারার কথা বলছেন। সেই সময় একই দুশ্চিন্তা ঘিরে ধরল বনেদি বাড়ির পুজোকেও।
বর্ধমান জেলার অন্যতম জমিদার বাড়ি বড়শুলের দে বাড়ির পুজোর প্রায় সাড়ে তিনশো বছরে এসেও এবছর পুজো নিয়ে দোলাচলে বাড়ির সদস্যরা। দে বাড়ির এষ্টেট ম্যানেজার দীপক দে জানিয়েছেন, কি হবে তাঁরাও বুঝতে পারছেন না। ইতিমধ্যে একপ্রস্থ মিটিং তাঁরা করেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। তাঁরা সকলেই মত দিয়েছেন ঐতিহ্য ও প্রথা মেনেই মায়ের পুজো হবে। কিন্তু আড়ম্বরের কি হবে? তার কোনো উত্তর এখনো মেলেনি। দীপকবাবু জানিয়েছেন, আবার তাঁরা মিটিংয়ে বসবেন এব্যাপারে। তবে সম্প্রতি বড়শুল এলাকায় লাগাতার করোনা সংক্রমণের খবর হচ্ছে। ফলে তাঁরাও শংকিত হয়ে পড়েছেন।
উল্লেখ্য, এই বড়শুলের জমিদার দে বাড়ির পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানান গল্প। দেবী দুর্গা এখানে হরগৌরী। অর্থাৎ শিবের কোলে দুর্গা। দীপকবাবু জানিয়েছেন, জমিদারিত্বের আমলে পুজোকে ঘিরে নানান অনুষ্ঠান হত। যাত্রাপালা থেকে শুরু করে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাড়ির মহিলারা ছিলেন পর্দানসীন। পুজোর আনন্দ উপভোগ করার জন্য তাঁদের জন্য দুর্গামন্দিরকে ঘিরে তৈরী হয়েছিল আলাদা পথ। রান্নার জন্যও ছিলো ভিয়েন ঘর। কালের নিয়মে সে সবের অনেকটাই অস্তমিত। তবুও জমিদার বাড়ির পুজো বলে কথা। তাই প্রতিবছর নিয়ম নিষ্ঠার কোনো অভাব থাকে না। পুজোর চারদিন গমগম করে আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে। কিন্তু এবার কি হবে - খুবই দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন, এষ্টেট ম্যানেজার।
শুধু বড়শুল দে বাড়িই নয়, পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরের কোলসরা গ্রামের ঘোষাল বাড়ির দুর্গাপুজো এবছর প্রায় ৩৬৬ বছরে পা দিতে চলেছে। ঘোষাল বাড়ির বর্তমান বংশধর সমীর ঘোষাল জানিয়েছেন, ১৬৫৫ খ্রীষ্টাব্দে ঘোষাল বংশের পুর্ব পুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র ঘোষাল দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। সেই থেকে চলে আসছে এই পুজো। পুজোর বিশেষত্বের মধ্যে রয়েছে আগাগোড়াই পুজোর সমস্ত ক্রিয়াকর্ম করা হয় গঙ্গাজল দিয়ে। সেজন্য পরিবারের সদস্যরা গাড়ি নিয়ে গিয়ে গঙ্গা থেকে জল নিয়ে আসেন। বস্তুত, ঘোষাল বাড়ির পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানান গল্প। কিন্তু চলতি করোনা আবহের জেরে এবারও কি অন্যান্যবারের মত আত্মীয়স্বজন সমাগমে পুজো করা যাবে? পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন সমীরবাবুই।
তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে তাতে এবার আত্মীয়স্বজনরা পুজোয় আসতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না। করোনার আতংকে সকলেই কমবেশী দিশাহারা। তবুও ঐতিহ্য ও পরম্পরা মেনেই তাঁরা দুর্গাপুজো করবেন। তিনি জানিয়েছেন, যেভাবে প্রতিবছর পুজো হয় সেই একইভাবে এবারেও পুজোর সমস্ত আচার নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ঘোষাল বংশের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও এই সময়ে তাঁরা সকলেই হাজির হন। কেবলমাত্র ঘোষাল বংশের সদস্যদের সঠিক উপস্থিতি থাকলে প্রতিদিন (অন্যান্যবার) ৩০০ জনেরও বেশি পাত পরে। এর সঙ্গে রয়েছে অন্যান্যরা।
কিন্তু এবারের পরিস্থিতি যেহেতু একেবারে ভিন্ন তাই তাঁরা মনে করছেন ঘোষাল বাড়ির কাছেপিঠে যে সমস্ত আত্মীয় স্বজনরা আছেন তাঁরা আসতে পারলেও দুরের আত্মীয় স্বজনরা সম্ভবত আসতে পারবেন না। ফলে পুজো হলেও হয়ত মন ভরবে না। কারণ পরিবারের সকলেই অপেক্ষা করে থাকেন এই দিনটার জন্য।