Headlines
Loading...
বর্ধমান ষ্টেশন কাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান লিপিবদ্ধ করবে রেল, শুরু রাজনীতি

বর্ধমান ষ্টেশন কাণ্ডে প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান লিপিবদ্ধ করবে রেল, শুরু রাজনীতি


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: শনিবার রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল বর্ধমান রেল ষ্টেশনের মূল গেটের ওপরের একাংশ। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। আহত হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হপন টু়ডু নামে এক ব্যক্তি। এদিন তিনি তাঁর মেয়েকে নিয়ে বর্ধমান ষ্টেশনে ট্রেন ধরতে এসেছিলেন। আচমকাই ষ্টেশনের ওয়েটিং রুমের দোতলার একাংশ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ায় তিনি জখম হন। তাঁর একটি পা ভেঙে যায়। দ্রুততার সঙ্গে দুজনকেই উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রবিবার সকালে আহত হপন টুডুকে বর্ধমান জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে, এই ষ্টেশনের একাংশ ভেঙে পড়া নিয়ে একদিকে যেমন রেলের চুড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে, তেমনি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাত্রি ৮টা বেজে ২ মিনিটে প্রথম দোতলার কিছু কাঁচ ভেঙে পড়ে। তা দেখেই নিচে যাঁরা ছিলেন তাঁরা সতর্ক হয়ে যান। এরপর ৮টা বেজে ১২ মিনিটে দ্বিতীয়বার ধ্বসে পড়ে গাড়ি বারান্দার একাংশ। ৮টা বেজে ১৯ মিনিটে ফের ভেঙে পড়ে ওয়েটিং রুমের দোতলার একটি বড় অংশ। মূহর্তের মধ্যে গোটা এলাকা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শুরু হয় আতংক ও ছুটোছুটি।


ঘটনার পরপরই এলাকায় ছুটে আসেন আরপিএফের জওয়ান এবং রেল পুলিশ। খবর পেয়ে বর্ধমান থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির হয়। হাজির হয় সিভিল ডিফেন্স এবং সিভিক ভলেণ্টিয়াররাও। গোটা এলাকাকে ঘিরে দেওয়া হয়। দ্রুততার সঙ্গে বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা এসে হাজির হন ঘটনাস্থলে। বিকল্প আলোর ব্যবস্থা করা হয়। শুরু হয় উদ্ধার কাজ। ভগ্নস্তুপ সরিয়ে ভেতরে কোনো প্রাণ আটকে আছে কিনা তা নিয়েই শুরু হয় দুশ্চিন্তা। একইসঙ্গে ভবনের বাকি অংশেও দেখা দেয় ফাটল। জায়গায় জায়গায় ঝুলতে থাকে বড় বড় চাঁই। 

এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পূর্ব রেলের ডিআরএম ইশাক খান, আই আর পি ব্যান্ডেল শান্তনু মিত্র, জেলাশাসক বিজয় ভারতী, অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগী, অতিরিক্ত্ পুলিশ সুপার প্রিয়ব্রত রায় সহ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। কার্যত, হাওয়ার গতিতে ভাইরাল হয়ে যায় ষ্টেশনের ভেঙে পড়ার এই দৃশ্য। খবর পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী জরুরী ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পাঠান রাজ্যের প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথকে। 

তাঁর সঙ্গে আসেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহকারী সভাধিপতি দেবু টুড়ু, জেলা পরিষদের মেণ্টর উজ্জ্বল প্রামাণিক, বর্ধমান উত্তরের বিধায়ক নিশীথ মালিক, জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্ত, বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার খোকন দাস, অরূপ দাস সহ জনপ্রতিনিধিরা। রাত্রি প্রায় ২ টো পর্যন্ত তাঁরা ঘটনাস্থলে থেকে উদ্ধার কাজের তদারকি করতে থাকেন। রবিবার ভোর পর্যন্ত এই উদ্ধার কাজ চলে। 

এদিকে, এই ঘটনার পর জেলাশাসক বিজয় ভারতী জানান, অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। রেলের এই ভবনটির অবস্থা ভাল ছিল না। গোটা ভবনকেই ভেঙে ফেলতে হবে। এব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁরা বৈঠকে বসতে চলেছেন। অপরদিকে, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, রেলের এই ভবনটির যে অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল তা জেনেও রেল কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে বাইরে চাকচিক্য করা হয়েছে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারটাও ঠিক এইভাবেই চলছে - ভেতরটা অন্তরসারশূন্য, বাইরে রংচং চলছে। 

স্বপনবাবু জানিয়েছেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনিই রেলের এই সমস্ত ভবনকে রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকার রেলের ভাড়া বাড়াতেই ব্যস্ত। যাত্রী পরিষেবা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। এদিকে, রাতভর উদ্ধার কাজ এবং ভগ্নস্তূপ সরানোর পর রবিবার সকাল থেকেই অবশিষ্টাংশ ভবন যাতে ফের হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে না পারে, সেজন্য এদিন সকাল থেকেই লোহার খাঁচা দিয়ে আটকে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

এদিন দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মা। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১০দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট আসার পরই সমস্ত বিষয়টি জানা যাবে। তিনি জানিয়েছেন, এই ভবনটির গোটাটাই ভাঙা হবে। এজন্য খ্ড়গপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞদেরও সাহায্য নেওয়া হবে। 

উল্লেখ্য, শনিবার রাতের এই দুর্ঘটনার পরই বর্ধমান ষ্টেশনের ১নং প্ল্যাটফর্মে সমস্ত যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। রবিবার সকাল থেকে থ্রু ট্রেনগুলিকে ১নং ষ্টেশন দিয়ে পাঠানো হলেও অন্য কোনো ট্রেনকে দাঁড়াতে দেওয়া হয়নি। এরই পাশাপাশি সোমবার রেলের এই তদন্ত কমিটি বিকাল ৪টে থেকে ৬ টা পর্যন্ত প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান লিপিবদ্ধ করবেন বলে রেল সূত্রে জানা গেছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});