ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: গলসীর শিকারপুর গ্রামে বালি বোঝাই ডাম্পার উল্টে বালি চাপা পড়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নড়েচড়ে বসল জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাস্তা অবরোধ করে মৃতদেহ আটকে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার ঘটনায় গলসী থানার পুলিশ মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে এই ঘটনার পরই গলসী ১ ও ২ এলাকার সমস্ত বালিঘাটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তিনি জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই জেলার বালিঘাটগুলি নিয়ে বৈঠক ডাকা হচ্ছে। সেখানে সমস্ত বালিঘাট ইজারাদারদেরও ডাকা হচ্ছে। ওই বৈঠকের পরই বালিঘাট চালানোর অনুমোদন দেওয়া হবে।
জেলাশাসক জানিয়েছেন, বালিঘাট নিয়ে ওঠা লাগাতার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁরা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন। তার মধ্যে প্রত্যেকটি বালিঘাটে গোপনে ড্রোণ দিয়ে নজরদারী চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে বেশ কয়েকটি ড্রোণ কেনা হচ্ছে। এছাড়াও প্রত্যেকটি বালিঘাটের মুখে একটি হাইটবার লাগানো হবে। যাতে বালিঘাট থেকে কোনো লরীই বের হতে না পারেন। সেক্ষেত্রে বালিঘাট থেকে ট্র্যাক্টরের মাধ্যমে বালি নিয়ে এসে তা বাইরে কোথাও মজুদ করতে হবে। সেখান থেকে লরীতে বোঝাই করতে হবে। এরফলে নজরদারী চালানো আরও সহজতর হবে।
অন্যদিকে, জেলা ভূমি দপ্তরের অতিরিক্ত জেলাশাসক শশীকুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত গোটা জেলায় ১ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা বালি সংক্রান্ত ব্যাপারে রেভিন্যু আদায় করা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টো এবং দুপুর ২ টো থেকে রাত্রি ১০ টা পর্যন্ত ভূমি দপ্তরের বিশেষ টীম নজরদারী চালাচ্ছে। তারই ফলশ্রুতিতে এই বিশাল পরিমাণ জরিমানা আদায় করা গেছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার শিকারপুরের ঘটনায় ধৃতদের বর্ধমান আদালতে তোলা হয়। এদের মধ্যে ১০ জন গ্রামবাসী ছাড়াও রয়েছেন ৩জন গাড়ির চালক। ধৃতদের মধ্যে গাড়ি চালকদের এবং ৪জন গ্রামবাসীকে পুলিশ এদিন পুলিশী হেফাজতে নেবার আবেদন জানান। বিচারক তাঁদের ৪ দিনের পুলিশী হেফাজত মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি, মঙ্গলবার গভীর রাতে শিকারপুর গ্রামের এই ঘটনায় একটি তদন্ত শুরু হয়েছে বলে অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়েছেন। ওই দিনের ঘটনায় প্রশাসনিক কোনো গাফিলতি ছিল কিনা বিশেষত গলসীর বিএলআরও দপ্তরের কোনো গাফিলতি ছিল না তা রিপোর্ট পাবার পরই জানা যাবে।
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত একই পরিবারের ৫জনের মৃতদেহের ময়না তদন্ত হল। এদিন হাসপাতালের পুলিশ মর্গ থেকে মৃতদেহ নিয়ে যেতে হাজির ছিলেন গলসীর তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক অলোক মাঝি, খণ্ডঘোষের বিধায়ক নবীন বাগ, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু, গলসী ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি জাকির হোসেন, নব হাজরা প্রমুখরাও।