ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: গতবছরই বর্ধমানে প্রশাসনিক সভা করতে এসে বর্ধমান শহরের ইছলাবাদ বিবেকানন্দ বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও। সেইসময় স্কুলেই ছাত্রীদের কাছ থেকে আব্দার করে গানও শুনতে চান মুখ্যমন্ত্রী। পরে স্কুল সংলগ্ন খেলার মাঠ নিয়ে ছাত্রীদের অভিযোগ মন দিয়ে শুনে দ্রুত ফিরহাদ হাকিমকে ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই নির্দেশের পর অবশেষে কিছুটা জট কাটলেও স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার নামে একটি ব্যানারকে ঘিরে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে গোটা এলাকায়।
বর্ধমান শহরের ইছলাবাদের এই স্কুল সংলগ্ন পদ্মশ্রী ক্লাবের সম্পাদক স্বপন দাস জানিয়েছেন, তাঁরা স্কুল সংলগ্ন এই মাঠেই গত ৬৮ বছর ধরে দুর্গাপুজো করে আসছেন। বর্ধমান শহরের বিগ বাজেটের পুজোগুলোর মধ্যে এই ক্লাবের পুজোটিও অন্যতম একটি পুজো হিসাবে পরিচিত। শুধু তাইই নয়, স্কুলের মাঠকেও খেলার মাঠ হিসাবে তাঁরা ব্যবহার করছেন। এলাকার বয়স্ক মানুষরা এই মাঠেই প্রাতঃভ্রমণ করেন। শিশুরাও খেলাধুলা করে।
কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ভাস্বতী লাহিড়ী এবং স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি সিদ্ধেশ্বর দাসের নামে একটি ব্যানারে উল্লেখ করা হয়েছে 'বিদ্যালয় ছুটির পর বিকাল সাড়ে চারটে থেকে শিশু ও প্রবীণ ব্যক্তিগণের খেলা ও শরীর চর্চার জন্য বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ খোলা থাকবে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।'
স্বপনবাবু জানিয়েছেন, অথচ সম্প্রতি বর্ধমান পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ এব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষকে যে চিঠি দিয়েছেন' সেখানে পরিষ্কারভাবে দুটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে ক্লাব ওই স্কুলের মাঠে দীর্ঘদিন ধরে পুজো করে আসছে তাদের সেই পুজো করার অধিকার বলবত থাকবে। আরও বলা হয়েছে - প্রবীণ মানুষ এবং স্থানীয় ছেলেমেয়েরা ওই মাঠকে যেভাবে ব্যবহার করে আসছে তাও বলবত থাকবে সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত।
স্বপনবাবু জানিয়েছেন, কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা যে ব্যানার দিয়েছেন তাতে কৌশলে ক্লাবের পুজো করার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তাতেই বিভ্রান্তি বেড়েছে। অন্যদিকে, স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা মধুশ্রী চ্যাটার্জী জানিয়েছেন, স্কুলের এই মাঠের নানান অসুবিধার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্কুলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী স্কুল পরিদর্শনের সময় স্কুলের ছাত্রীরাও তাদের অসুবিধা তুলে ধরে। ইতিমধ্যেই স্কুলের এই মাঠকে ঘিরে ১০ লক্ষ টাকা অনুদানও দেওয়া হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে কি কি কাজ করা হবে সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখাও হয়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, এই টাকায় একটি স্থানীয় সাংস্কৃতিক মঞ্চ এবং স্কুলের মাঠকে খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। মধুশ্রীদেবী জানিয়েছেন, তাঁরা পুজোর বা ছেলেমেয়েদের খেলার বিরোধী নন। এর আগেও একাধিক খেলার অনুমোদন দিয়েছেন তাঁরা। তবে স্কুল চলার সময় এই অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু মেয়েদের স্কুল তাই নিরাপত্তার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এদিন স্কুলের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, স্কুলের এই মাঠকে ঘিরে একাধিক গাছ লাগানো হলেও অনেক গাছই নষ্ট হয়ে গেছে। শুধু তাইই নয়, গত অক্টোবর মাসে এই মাঠেই দুর্গাপুজো করা হলেও মাঠকে সেভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়নি। মধুশ্রীদেবী জানিয়েছেন, তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর অনুদানের টাকায় খেলার মাঠকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে চাইছেন।
এব্যাপারে বর্ধমান পুরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ওই মাঠটিকে স্কুলের অনুকূলে দেওয়ার জন্য। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ। কারণ ওই জমির মালিকানা রয়েছে পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের। তারা সেই জমি শিক্ষা দপ্তরকে দেবে। শিক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে তা স্কুল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হবে। তাই স্কুলকে ওই মাঠ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্তবর্তীকালীন এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দুটি শর্ত সাপেক্ষে।