Headlines
Loading...
কেক নয়, পিঠের হরেক পদ নিয়েই এবার বড়দিন পালনের উদ্যোগ  মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের

কেক নয়, পিঠের হরেক পদ নিয়েই এবার বড়দিন পালনের উদ্যোগ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: রাত পোহালেই বাজবে গির্জায় গির্জায় ঘণ্টা। ঘণ্টার ধ্বনি দিয়েই জানিয়ে দেওয়া হবে আরও একটা বড়দিনের উৎসবের সূচনার কথা। কলকাতার পার্ক স্ট্রীট থেকে জেলায় জেলায় যখন রঙীন আলোয় সেজে উঠছে বড়দিনের উৎসব প্রাঙ্গণ, তখন দীর্ঘদিনের মনস্কামনা পূরণ করতে একেবারে দেশীয়ভাবে বড়দিন পালনের উদ্যোগ নিলেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। 

স্বপনবাবু জানিয়েছেন, অনেক দিন ধরেই তিনি ভাবছিলেন, কলকাতার পার্ক স্ট্রীট সহ বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে বড়দিনের উৎসব পালন করা হয় তার মধ্যে থাকে বিদেশী ছোঁয়া। আর তিনি চান একেবারে দেশীয়ভাবে এই উৎসব পালন করতে। বড়দিন মানেই কেক। কিন্তু স্বপনবাবু জানিয়েছেন, তিনি এবার প্রথম পালন করতে চলেছেন দেশীয় হরেক রকমের পিঠে নিয়ে বড়দিনের উৎসব। 

উল্লেখ্য, দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে একটানা খাল বিলকে না বুজিয়ে তা সংরক্ষণ করা এবং সেই সমস্ত খাল বিলে দেশীয় লুপ্তপ্রায় নানান ধরণের চুনোমাছ – যেমন চিংড়ি, পুঁটি, খোলসে, কই, ট্যাংরা, মৌরলা প্রভৃতি চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য কার্যত আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। ২০০০ সাল থেকে পূর্বস্থলীর বিদ্যানগরের বড় কোবলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে খালবিল চুনোমাছ ও পিঠে পুলি উৎসবও। একেবারে প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষ যাঁরা বিভিন্ন খাল বিল ঘেঁটে বিভিন্ন ধরণের চুনোমাছ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে সংসার চালান – তাদেরও আর্থ সামাজিক উন্নতির প্রচেষ্টাকে এই উৎসবের সঙ্গে যুক্তও করেছেন তিনি। 

মূলত বড় কোবলা গ্রামের প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার বাঁশদহ ও চাঁদের বিলকে ঘিরেই তিনি এই উৎসব শুরু করেছিলেন। স্বপনবাবু জানিয়েছেন, একটা সময় এই দুটি বড় বিল যা গিয়ে ঠেকেছে গঙ্গা তথা ভাগীরথীতে তা মজে যাচ্ছিল। আর সেই মজে যাওয়া বিলকেই তিনি সংস্কারের উদ্যোগ নেন এবং সেখানে এই চুনো মাছের চাষ শুরুর উদ্যোগ নেন। মঙ্গলবার যখন বড়দিনের পিকনিক, কেক নিয়ে মেতে উঠতে চলেছে গোটা দেশ, তখন স্বপনবাবু বাঁশদহ বিলের চারপাশে ৫টি জায়গায় বড়দিনের উৎসব পালন করতে চলেছেন একেবারে দেশীয় ভাবে। 

স্বপনবাবু জানিয়েছেন, যেভাবে কলকাতার পার্ক স্ট্রীটে বড়দিনের কেক কেটে উৎসব পালন হয়, সেই একইভাবে তাঁরাও দেশীয় পিঠের বিভিন্ন পদ দিয়েই এবার প্রথম বড়দিনের উৎসবের সূচনা করবেন। উল্লেখ্য, স্বপনবাবু জানিয়েছেন, গতবছর থেকে এই জলাশয়ে পরিযায়ী পাখি আসায় তাঁরা ভীষণ খুশী। কারণ গতবছরই রাজ্য পর্যটন দপ্তর থেকে এই বিলকে ঘিরে দর্শকদের বেড়ানোর জন্য একটি ট্যুরিষ্ট লজ তৈরী করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই তৈরী হয়েছে পাকা রাস্তা। চুনোমাছের উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া স্থানীয় মহিলাদের ১২টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর উদ্যোগে নানান ধরণের পিঠে তৈরী করে তা বিক্রির ব্যবস্থাও। চোখের সামনেই বিভিন্ন ধরণের পিঠে তৈরী করে তা পরিবেশন করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। স্বাভাবিকভাবেই পরিযায়ী পাখি আসার খবরে রীতিমত উৎফুল্ল গোটা এলাকা। কারণ পর্যটকরা পাখী দেখতে আসলে তার সঙ্গে এভাবে হরেকরকম পিঠেরও আস্বাদ করতে পারবেন। ফলে এলাকার মানুষের অর্থনীতিরও পরিবর্তন ঘটবে। 

বুধবার এই উৎসবের উদ্বোধন করতে আসেন রাজ্যের মৎসমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। প্রতিবারের মত এবছরও স্বপনবাবুর উদ্যোগে এই খালবিল ও চুনো মাছের উৎসবের আয়োজন চলছে। ৩দিন ধরে চলবে এই উৎসব। আর তার আগেই ২৪ ডিসেম্বরের রাত্রি ১২টায় গোটা দেশের সঙ্গে এখানেও পালিত হবে বড়দিন। উল্লেখ্য, গতবছরই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় স্বপনবাবুর এই দীর্ঘদিনের আন্দোলনকে স্বীকৃতি সহ রাজ্যে রোল মডেল হিসাবে ঘোষণা করেছেন এই চুনোমাছ ও খালবিল উৎসবকে। আর তাই সরকারীভাবে গোটা রাজ্যেই খালবিল বোঁজানো বন্ধের নির্দেশ জারী করা হয়েছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});