Headlines
Loading...
বড়দিনের আগেই ফের বর্ধমানের চার্চের জমিকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

বড়দিনের আগেই ফের বর্ধমানের চার্চের জমিকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: আর কয়েকদিন পরেই ২৫ ডিসেম্বর তথা বড়দিন। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের শ্রেষ্ঠ উৎসব। কিন্তু তার আগেই বর্ধমানের ঐতিহ্যবাহী চার্চকে ঘিরে তুঙ্গে উঠল বিতর্ক। বর্ধমান শহরের প্রায় ২০০ বছরেরও পুরনো খ্রীষ্টান চার্চ তথা হেরিটেজ ভবন সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হল প্রথম দফায় প্রাচীর দেওয়ার কাজ। আর তারপরেই তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একটু একটু করে চার্চের এই জায়গাকে প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেবার অভিযোগ তুলেছেন চার্চের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি এই চার্চ ও চার্চ সংলগ্ন এলাকাকে বাঁচানোর জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছেন চার্চের বেশ কিছু ভক্তরা। 

বর্ধমান শহরের কার্জন গেট তথা বিজয় তোরণ সংলগ্ন এই খ্রীষ্টান চার্চের বয়স ২০০ বছরেরও বেশি। জানা গেছে, ২০১৬ সালে এই চার্চ ২০০ বছর অতিক্রান্ত করেছে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমশই চার্চ ভগ্নদশায় পরিণত হচ্ছে। এমতবস্থায় চার্চের পক্ষ থেকে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে এই ঐতিহাসিক চার্চকে হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা করার আবেদন করা হয়। সেই আবেদন অনুসারে ২০০৬ সালে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এই চার্চকে হেরিটেজ সম্পত্তি হিসাবে ঘোষণাও করে। 

বর্ধমানের এই হেরিটেজ চার্চের প্রাক্তন সম্পাদক বিধান মল্লিক জানিয়েছেন, একটু একটু করে চার্চের জায়গা প্রমোটারদের হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত চলছেই দীর্ঘদিন ধরে। এমনকি যাঁদের সঙ্গে এর আগে চুক্তিভিত্তিক জমি প্রদান করা হয়, সেই চুক্তি শেষ হবার পরও জমি চার্চের হাতে ফেরত দেওয়া হয়নি। তিনি জানিয়েছেন, একটু একটু করে খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের এই প্রার্থনার জায়গা দখল হয়েই চলেছে। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি এই চার্চের সম্পাদক রাহুল মইলী একটি কেসে অভিযুক্ত হন। বর্তমানে চার্চের কোনো কমিটিই নেই। কিন্তু সদ্য প্রাক্তন ওই সম্পাদক রাহুল মইলী চার্চের জমিকে কৌশলে প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত করছেন। এমনকি চার্চের বিউটিফিকেশনের নাম করে বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদের মাধ্যমে মঙ্গলবার থেকে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। 

বিধানবাবু জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই দফায় দফায় নানান অভিযোগের ভিত্তিতে চার্চের ওই জায়গার ওপর হাইকোর্ট এবং সুপ্রীম কোর্টের স্থগিতাদেশ রয়েছে। এমনকি চার্চের ওই জায়গার মালিকানা রয়েছে কলকাতা ডায়াসিসের। নিয়মানুযায়ী কোনো নির্মাণ কাজ করতে হলে জমির মালিকের নো অবজেকশন থাকা দরকার। এক্ষেত্রে সেই নিয়মও মানা হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই তাঁরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কাতর প্রার্থনা করেছেন, বর্ধমানের ঐতিহ্য এই চার্চের জমিকে প্রোমোটারদের থাবা থেকে বাঁচান। 

যদিও বিধানবাবুর এই অভিযোগ মানতে নারাজ সদ্য প্রাক্তন সম্পাদক রাহুল মইলী। তিনি জানিয়েছেন, চার্চের ভবনটির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। তাই তিনি সম্পাদক থাকাকালীন সকলের সম্মতিতেই এই চার্চ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বর্ধমান পুরসভা, বর্ধমান উন্নয়ন পর্ষদ এবং বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বিডিএ এই চার্চের বিউটিফিকেশনের কাজ শুরু করেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই যাঁরা চার্চের জমি তথা চার্চ সংলগ্ন কোয়ার্টারগুলিকে জবরদখল করে রেখেছেন তাঁরা উন্নয়নের কাজে বাধা দিচ্ছেন। তাই এদিন পুলিশী সহায়তার মধ্যে দিয়েই চার্চের জমিকে প্রাচীর দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু হয়েছে। 

বিধান মল্লিক অভিযোগ করেছেন, এখন প্রাচীর দিয়ে জমি ঘেরা হচ্ছে। এরপর চার্চের সামনের অংশে তৈরী করা হবে দোকানঘর। কোটি কোটি টাকার কাটমানির খেলা চলছে। অপরদিকে, আদালতের স্থগিতাদেশ এবং হেরিটেজ কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও কিভাবে বিডিএ এই নির্মাণ কাজ শুরু করেছে সে সম্পর্কে বিডিএর সিইও শান্তনু বসু জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশের বিষয়ে তাঁদের কেউ কিছু জানায়নি। যদি আদালতের স্থগিতাদেশ থাকে তাহলে অবশ্যই কাজ বন্ধ করা হবে। 

পাশাপাশি তিনি জানিয়েছেন, ওই নির্মাণ কাজ করার জন্য বার কয়েক বিডিএ-এর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের পাঠানো হয়েছে চার্চে। তখনও কেউ কোনো আপত্তি জানায়নি। এদিকে, আর কয়েকদিন পরেই বড়দিনের উৎসব শুরু হবে। কিন্তু তার আগেই বর্ধমানের এই ঐতিহ্যবাহী চার্চকে ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে উঠায় শহর জুড়েই শোরগোল পড়ে গেছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});