ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ এবার প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলীর ক্ষেত্রেও কাটমানির অভিযোগ তুললেন বিজেপির টিচারস্ সেল। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমান জেলা টিচারস্ সেলের পক্ষ থেকে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রায় ২৮ দফা দাবীতে বিক্ষোভ দেখানো হল জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ অফিস এবং জেলা স্কুল পরিদর্শকের অফিসের সামনে।
বিজেপির এই টিচারস্ সেলের রাজ্য আহ্বায়ক দীপল বিশ্বাস জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবীদাওয়া জানিয়ে আসছেন সরকারের কাছে। কিন্তু এখনও সেই সমস্ত দাবী উপেক্ষিত রয়ে গেছে। তিনি এদিন অভিযোগ করেছেন, গোটা রাজ্যে এমন ১১১ জন তাঁদের সংগঠনের সদস্য রয়েছেন যাঁদের বদলী আটকে রাখা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। এমনকি এনসিআরটির নিয়মকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়েই এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলী করা হচ্ছে শিক্ষকদের।
এই অমানবিক কাজের বিরুদ্ধেও তাঁরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এদিন সরাসরি শিক্ষকদের বদলীর বিষয়ে কাটমানির অভিযোগ তুলে দীপলবাবুরা জানিয়েছেন, কেবলমাত্র অবিভক্ত বর্ধমান জেলায় বহু শিক্ষক যাঁরা পশ্চিম বর্ধমানের দিকে পড়েছিলেন কিন্তু তাঁদের বাড়ি পূর্ব বর্ধমান জেলায় তাঁদের নিরবে বদলী হয়ে গেছে। আশ্চর্য্যজনকভাবেই কতিপয় শিক্ষকের এই বদলীর বিষয়ে নোটিশ দিয়ে তাঁদের বদলী কার্যকর করা হয়েছে। অথচ যাঁরা দীর্ঘদিন বদলীর বিষয়ে আবেদন করে বসে আছেন তাঁদের বদলী এখনও হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই একই ক্ষেত্রে দুরকম নিয়ম চলছে। কার্যত শিক্ষাক্ষেত্রে তুঘলকি কাজ চলছে বলেও তাঁরা অভিযোগ তুলেছেন।
এদিন এই টিচারস্ সেলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের কেবলমাত্র শিক্ষার ক্ষেত্রেই রাখতে হবে। অর্থাৎ তাঁরা কেবল পাঠদানের কাজই করবেন। তাঁদের দিয়ে শিক্ষার বাইরে অন্য কাজ করানো যাবে না। এরই পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের যে পোশাক অনুদান দেওয়া হয় সেই অনুদানের টাকা সরাসরি সংশ্লিষ্ট স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর একাউণ্টেই দেবার দাবী তুলেছেন তাঁরা। কারণ এই টাকা দেবার ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষকদের মাঝে রাখায় তাঁরা কার্যতই বিড়ম্বনায় পড়ছেন। কারণ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের নির্দেশেই পোশাক কোনখান থেকে কিনতে হবে তা বলে দেওয়া হচ্ছে। কার্যত ঘুরপথেই তৃণমূল নেতাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কাটমানির টাকা।
এদিন বিজেপির শিক্ষক নেতারা অভিযোগ করেছেন,স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলিকে চাঙ্গা করতে সরকার এই পোশাক তৈরীর জন্য যে উদ্যোগ নিয়েছে তা কার্যত মাঠে মারা যাচ্ছে। অধিকাংশ স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীই এই পোশাক নিজেরা তৈরী না করে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিনে তা সরবরাহ করছেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রধান শিক্ষকদের এর বাইরে রাখার আবেদন করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি তাঁরা এদিন জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে অধিকাংশ প্রাথমিক স্কুলগুলিতে বিদ্যুত পৌঁছে গেলেও সরকারীভাবে এই বিদ্যুত বিলের টাকা দেওয়া হয় না। ফলে বিদ্যুত বিলের টাকা হয় শিক্ষকদের নিজেদের পকেট থেকে বা অন্যকোনো ভাবে জোগাড় করতে হয়। এব্যাপারেও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বিদ্যুত বিলের খরচ সরকারীভাবে দেবার দাবী তোলা হয়েছে। এদিন টিচার সেলের সদস্যরা বর্ধমান ষ্টেশন থেকে বিক্ষোভ মিছিল করে কার্জন গেটের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা স্মারকলিপি পেশ করেন।