Headlines
Loading...
পূর্ব বর্ধমানে সোমবার থেকে চালু হওয়া গ্রিভেন্স বক্সে পরতে শুরু করলো গোছা গোছা অভিযোগ

পূর্ব বর্ধমানে সোমবার থেকে চালু হওয়া গ্রিভেন্স বক্সে পরতে শুরু করলো গোছা গোছা অভিযোগ



ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক হিসাবে আসীন হয়েই একাধিক পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিলেন নয়া জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তার মধ্যে একটি যেমন ছিল সরকারী আধিকারিকদের সরকারী কাজের নামে যথেচ্ছ গাড়ি ব্যবহারে রাশ টানার বিষয়, তেমনি ছিল জেলাবাসীর বিবিধ সমস্যা ও অভিযোগ শোনা এবং এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রতিকার করার মত পদক্ষেপ গ্রহণ। আর এই কাজে জেলাশাসকের নির্দেশে ১ জুলাই থেকেই চালু হয়েছে গ্রিভেন্স ডে। 



জেলার সমস্ত আধিকারিকের দপ্তরেই সোমবার থেকে চালু হয়ে গেল এই গ্রিভেন্স সেলের কাজ। এই সেলের নোডাল অফিসার করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগীকে। উল্লেখ্য, বর্ধমানের নতুন জেলাশাসক হিসাবে নিয়োজিত হবার পরই জেলাশাসক জানিয়েছিলেন, তিনি জেনেছেন বহু আধিকারিক মাসে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত গাড়ির তেল বাবদ খরচ করেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, মাসে ৩০ হাজার টাকা খরচ হল কিন্তু কাজ কি হল? সেটাই জানতে চাইছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, তেল খরচের সঙ্গে সঙ্গে কাজের খতিয়ানেরও ভারসাম্য থাকা দরকার। বস্তুত, দীর্ঘদিন পর ফের সরকারী দপ্তরের গাড়ির তেল খরচ নিয়ে একেবারে সরাসরি প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়েছেন জেলাশাসক বিজয় ভারতী। 

উল্লেখ্য, বাম আমলে সরকারী গাড়ির যথেচ্ছ অপব্যহারের পাশাপাশি বিশেষ একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে গাড়ির তেল খরচ নিয়ে মৃদু আপত্তি তোলা হলেও পরবর্তীকালে আর তা নিয়ে তেমন কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। সরকারী আধিকারিকদের ভিন জেলা থেকে প্রতিদিন গাড়ি নিয়ে আনতে যাওয়া আবার প্রতিদিন ফিরে যাওয়া - কতদূর সমর্থনযোগ্য তা নিয়েও সরকারী কর্মী মহলে্ প্রশ্ন উঠলেও তা তেমনভাবে প্রকাশিত হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, এমন অনেক আধিকারিকও আছেন, যাঁরা কেবলমাত্র অফিসে আসার পর অফিসের প্রয়োজনেই গাড়ি পেতে পারেন। কিন্তু প্রতিদিনই দেখা গেছে, সেই সমস্ত আধিকারিকদের বর্ধমান ষ্টেশনে আনতে নিয়ম করেই গাড়ি যায়। তাঁরাও বহাল তবিয়তেই তাতে যাতায়াত করেন। আবার এমন অনেক আধিকারিকও আছেন যাঁদের পরিবারের লোকজন রীতিমত সরকারী গাড়ি ব্যবহার করে বাজার দোকানেও ঘোরেন। যার তেল খরচ দিতে হয় সরকারী কোষাগার থেকে। 

ফলে নতুন জেলাশাসক হিসাবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় দায়িত্ব নেবার পরই সেই ভীমরুলের চাকেই আঘাত হেনেছেন জেলাশাসক – এমনটাই মনে করছেন সরকারী কর্মীরা। তাঁরাও প্রকারান্তরে জেলাশাসকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। এদিকে, গাড়ির তেল খরচের পাশাপাশি জেলাশাসক জেলাবাসীর বিবিধ অভিযোগ সম্পর্কে সরাসরি জানতে ১জুলাই থেকেই গোটা জেলা জুড়ে যে গ্রিভেন্স বক্স চালু করেছেন, তাতে প্রথম দিনেই গোছা গোছা অভিযোগ জমা পড়েছে জানা গেছে। কেবলমাত্র বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা শাসকের দপ্তরেই এদিন ১০টিরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসকের দপ্তরে জমা পড়েছে ১টি অভিযোগ। 

অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী জানিয়েছেন, জেলার সমস্ত আধিকারিকদের কাছে মোট কত অভিযোগ জমা পড়েছে এখনও তার হিসাবে আসেনি। উল্লেখ্য, জেলাশাসক জানিয়েছেন, সপ্তাহের প্রথম দিন প্রতি সোমবার এই অভিযোগ গ্রহণ করা হবে। এরপর মঙ্গলবার সেই অভিযোগগুলি নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। পরের দিন অর্থাত বুধবার সেই সমস্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে আধিকারিকরা সংশ্লিষ্ট জায়গায় জায়গায় যাবেন এবং চেষ্টা করবেন এক সপ্তাহের মধ্যেই তা নিষ্পত্তি করতে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ আসলেও তার নিষ্পত্তি রাজ্য সরকারের নির্দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে। সেজন্য সেইসব ক্ষেত্রে সময়টা আরও বেশি লাগতে পারে। 

অপরদিকে, এদিন বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু সরকার জানিয়েছেন,তাঁরা অনেক আগে থেকেই গ্রিভেন্স বক্স চালু করেছেন। কিন্তু জেলাশাসকের নির্দেশের পর তাতে আরও গতি এসেছে। সোমবার তিনি জানিয়েছেন, গ্রিভেন্স সেল চালুর পর এদিন প্রথম দিনে ১০টিরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। প্রসঙ্গত, তিনি জানিয়েছেন,গত ১ মাসে কেবলমাত্র তাঁর মহকুমাতেই অভিযোগ জমা পড়েছে প্রায় ৩৫০-রও বেশি। এর মধ্যে সব থেকে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে নাগরিকরা সরকারী নিয়ম না মেনে বাড়ি করার অভিযোগ। কোথাও পুরসভার অনুমতি ছাড়াই আবার কোথাও সরকারী নিয়ম না মেনে গায়ের জোরে বাড়ি তৈরীর অভিযোগ করা হয়েছে। 

অভিযোগের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রীতিমত উদ্বেগজনকভাবেই বাবা-মাকে মারধর করা এবং বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবার অভিযোগ। মহকুমা শাসক জানিয়েছেন, এই ঘটনায় তাঁদের কাছে রীতিমত উদ্বেগজনক। তিনি জানিয়েছেন, যেভাবে এই ধরণের অভিযোগগুলি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব তা নিয়ে তাঁরা সত্যিই চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। মহকুমা শাসক জানিয়েছেন, সরকারী যে নিয়ম রয়েছে তাতে বেনিয়মভাবে বাড়িঘর তৈরী করলে তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ান্তরে সর্বাধিক ৩বার নোটিশ করা হয়। তাতেও কাজ না হলে তাঁরা পুলিশের সহযোগিতায় সেই অবৈধ নির্মাণ ভাঙার উদ্যোগ নেন। কিন্তু এরই মাঝে মামলা মোকর্দমা হতে থাকায় আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরাও কিছু করতে পারছেন না।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});