ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ 'পুলিশ যদি দিনের পর দিন অনৈতিক ভাবে বালির গাড়ি থেকে টাকা আদায় করতে পারে, তাহলে তারাও ওভারলোড করে বালি নিয়ে যাতায়াত করবে।' খোলাখুলি এমনই অভিযোগ করলেন খোদ বালির গাড়ি চালকরাই। জেলায় জেলায় প্রশাসনিক সভা করতে গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অবৈধ বালি খাদান সহ ওভারলোডিং নিয়ে। তবু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও কার্যত পুলিশী ইচ্ছায় দেদার চলছে অবৈধ বালি পাচার - এমনই অভিযোগ করেছেন খোদ বালির গাড়ি চালকরাই। তাদের অভিযোগ, তারাও চান নিয়ম মেনেই বালি লোড করে নিয়ে যেতে। কিন্তু বৈধ ভাবে বালি নিয়ে গেলেও তাদের পুলিশকে টাকা দিতে হচ্ছেই। না দিলে মিথ্যা অভিযোগে তাদের গাড়ি আটকে,কাগজপত্র সিজ করে তাদের জেলে ভরে দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি চালকদের অভিযোগ, প্রায় প্রতিটি থানায় চালু করা হয়েছে বিশেষ কার্ড। মাসে নুন্যতম ১ হাজার টাকার বিনিময়ে এই কার্ড নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ফলে তারা বাধ্য হচ্ছেন ওভারলোর্ডিং বালি নিয়ে যেতে। তারা চাইছেন, এব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।
এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে জেলা প্রশাসনের কাজে ক্ষোভ প্রকাশ করায় বুধবার বর্ধমানের বিডিএ হলে অবৈধ বালি খাদান নিয়ে জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হল। বৈঠকে অবৈধ বালিখাদান, বালিপাচার, ওভারলোড নিয়ে আলোচনা হয়।বিডিও,বিএলআর ও ওসি,আইসিদের কড়া হাতে গোটা বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন জেলাশাসক ও জেলাপুলিশ সুপার। এদিন জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, অবৈধ বালি পাচার বন্ধের জন্য প্রত্যেকটি ব্লকে একটি করে কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে বিডিওদের নেতৃত্বে। তাঁরা আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে কোথায় কোথায় বৈধ খাদানের পাশাপাশি অবৈধ খাদান চলছে তা চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাঁরা এই অবৈধ বালি পাচারের কাজে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে বিডিওদের এফআইআর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিনের বৈঠকে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব, জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখার্জী সহ বিভিন্ন থানার ওসি, আইসি, বিডিও এবং ভূমি দপ্তরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, দামোদরে জল কমতেই জামালপুর, রায়না, মাধবডিহি, খণ্ডঘোষ সর্বত্রই নদীগর্ভে জেসিবি মেশিন নিয়ে বালি তোলা হচ্ছে রমরমিয়ে। কার্যত প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এই কাজ করছে একশ্রেণীর বালি মাফিয়ারা। অভিযোগ এই কারবারে মদত রয়েছে স্থানীও বেশ কিছু শাসক দলের নেতারও। এমনকি জেলার বিভিন্ন রাস্তাতেও অবাধে চলছে ওভারলোডের বালির গাড়ি। জেলাশাসক জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত ই-টেণ্ডারের মাধ্যমে ৪৩০টি জায়গায় বালি তোলার ইজারা দেওয়া হয়েছে। তার বাইরে অন্য কোনো জায়গা থেকে বালি তোলা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত নভেম্বর মাসেই প্রায় ১৬০ জনকে পুলিশ অবৈধ বালি পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার করেছে। একই সঙ্গে প্রায় ২ কোটি টাকা জরিমানা বাবদ রাজস্বও আদায় হয়েছে।