ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ সেচের জলের হাহাকার দেখা দিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে। জেলার রায়না, খণ্ডঘোষ, ভাতার, আউশগ্রাম সহ একাধিক এলাকায় সেচের জলের অভাবে রীতিমত দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। বারবার প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও কোনো সুরাহা না হওয়ায় চুড়ান্ত হতাশার মধ্যে পড়েছেন এই সমস্ত এলাকার চাষীরা। এদিকে, চাষের জলের যোগান স্বাভাবিক রাখতে কয়েকদফায় প্রশাসনিক বৈঠক করে নির্দেশিকা জারী করেও কো্নো ফল না হওয়ায় আগামী ২৫ অক্টোবর ফের জেলা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন,লক্ষ্মীপুজোর পরের দিনই জরুরী ভিত্তিতে এব্যাপারে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে হাজির থাকার কথা রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী আশীষ বন্দোপাধ্যায় সহ মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার সহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সমস্ত আধিকারিকের।
উল্লেখ্য,দামোদরের জলাধারে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না থাকার কারণে অভিযোগ, এবছর পূর্ব বর্ধমান জেলায় জল ছাড়া হয়েছে অনেক কম পরিমাণেই। ফলে জেলার আমন চাষের সমস্ত এলাকায় সঠিকভাবে জল পৌঁছায়নি। স্বাভাবিকভাবেই দামোদরের ক্যানেলের মাধ্যমে (ওয়ান বি সি) জল সরবরাহের জন্য চাষীদের পক্ষ থেকে দফায় দফায় জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানানো হয়। বিশেষত, চলতি সময়ে আমন ধান ফলানোর সময়। ধানের গুছি সহ শীষ ধরেছে। ফলে এই সময় জলের যোগান সঠিক না থাকলে ধানের ফলন চুড়ান্তভাবে মার খাবার আশংকা দেখা দিয়েছে। জেলার আউশগ্রাম, গলসী,ভাতারের একাংশ,রায়না ও খণ্ডঘোষের বহু জমিই জলের অভাবে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তারই মধ্যে আগামী ১নভেম্বর থেকে সরকারী উদ্যোগে সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজ শুরু হচ্ছে। অন্যান্যবারের তুলনায় এবছর ধান ক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। অভাবী ধান বিক্রি বন্ধের জন্য সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু সেচের জলের অভাবে জেলার একটি বড় অংশে ধানের ফলন চূড়ান্তভাবেই মার খাওয়ার আশংকা করছেন চাষীরা। এমনকি ভয়াবহ ক্ষতির মুখেও চাষীদের পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ধান সংগ্রহের সরকারী অভিযান কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
চাষীদের একাংশের বক্তব্য, দ্রুততার সঙ্গে এখনই সেচের জল সরবরাহ করতে পারলে প্রায় সিংহভাগ ধানগাছই বাঁচানো সম্ভব হবে। কিন্তু দেরী করলে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষীরা। প্রত্যাশিত ফলনের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারবেন না চাষীরা। সহকারী সভাধিপতি জানিয়েছেন, যে সমস্ত জায়গায় ক্যানেলের মাধ্যমে জল পৌঁছানো সম্ভব হয়নি সেই সমস্ত জায়গায় সাব মার্শিবল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকার কারণে অনেক সাব মার্শিবলেরই বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। সেই সমস্ত বিদ্যুত সংযোগ ফের চালু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চাষের জমি সংশ্লিষ্ট পুকুর বা জলাশয় থেকেও সেচের জল সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার যে বৈঠক রয়েছে, সেই বৈঠকে জেলার এই সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। একইসঙ্গে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায় সে ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে। প্রয়োজনে তেনুঘাট থেকে এর আগেও যেভাবে জল কিনে তা সরবরাহ করা হয়েছিল এবারেও তা করা হবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।