পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ পুকুরে ঝপাত্ করে লাফানোর শব্দটা পেয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। সঙ্গে বুক ফাঁটা আর্তনাদ। ঘর থেকে বেরিয়ে পুকুরপাড়ে গিয়ে বুকটা ছ্যাঁত্ করে উঠেছিল তাঁদের। দেখেন পাশের বাড়ির বউটাই আধপোড়া অবস্থায় জলে ভাসছে! গার্হস্থ্য হিংসার আরও এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত ধরা পড়ল বীরভূমের বোলপুরের মকরমপুরে।
জানা গেছে,বছর দশেক আগে বোলপুরের মকরমপুরের বাসিন্দা কার্তিক দাসের সঙ্গে বিয়ে হয় কল্পনার। দিনমজুরির আয়ে তিনটি বাচ্চা, মা, দুই বোন আর স্ত্রীকে নিয়ে মোটের ওপর ঠিকঠাক চলত কার্তিকের সংসার। কিন্তু গোড়া থেকেই সমস্যা ছিল এক জায়গায়। কল্পনার কোনও কাজেই সন্তুষ্ট ছিলেন না কার্তিকের মা ও দুই বোন। অবিবাহিত দুই ননদ আর শাশুড়ির সঙ্গে প্রায়শই এই সব নিয়ে কল্পনার ঝগড়া হত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রাও। কার্তিক সবই জানত, কিন্তু সাদাসিধা মানুষটা সাংসারিক অশান্তি থেকে নিজেকে দূরেই রাখত বলে দাবি স্থানীয়দের।
দাস বাড়ির অশান্তি ছিল নিত্য নৈমিত্তিক। মঙ্গলবার সকালেও চিল-চিৎকারের শব্দ কানে গিয়েছিল প্রতিবেশীদের। কিন্তু রোজকার ঘটনা মনে করে প্রথমটায় বিশেষ আমল দেননি তাঁরা। যতক্ষণে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে পেরেছেন, ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে অনেক। জ্বলন্ত অবস্থায় পুকুরে ঝাঁপাতে দেখা গিয়েছে কল্পনাকে। জল থেকে কল্পনাকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রাই। মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দটুকু বেরোচ্ছিল। তারই মধ্যে তার এই মর্মান্তিক পরিণতির কারণ আবছাভাবে প্রতিবেশীদের বলেন তিনি। কল্পনার দাবি, রোজকার মতো এদিনও সামান্য বিষয় নিয়েই অশান্তি শুরু হয়। আচমকাই তার দুই ননদ তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেকে দেয়। দেশলাই কাঠি ছুড়ে মারে শাশুড়ি। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে কল্পনার শরীর। ওই অবস্থাতেই রান্নাঘর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে পাশেই ক্যানেলে ঝাঁপ দেন কল্পনা।কল্পনার আর্তনাদ শুনতে পেয়ে স্থানীয়রাই তাঁকে উদ্ধার করে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বোলপুর থানার পুলিশ আটক করেছে।