Headlines
Loading...
ঐতিহাসিক করন্দা হত্যালিলার ঘটনায় সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে ফের সঙ্কটে সিপিএম

ঐতিহাসিক করন্দা হত্যালিলার ঘটনায় সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে ফের সঙ্কটে সিপিএম


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৫ বছর পর মেমারীর করন্দা গ্রামে সিপিআইএম-এর হাতে নৃশংস্যভাবে খুন হয়ে যাওয়া পরিবারের সদস্যরা সুবিচারের আশায় নতুন করে বুক বাঁধতে শুরু করলেন। অন্যদিকে, ২৫ বছর আগের মুখোশ ফের বেআবরু হয়ে পড়ায় ঘোর অস্বস্তিতে বর্ধমান জেলা সিপিআইএম। বর্তমান সময়ে যখন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে কার্যত শাসক তৃনমূলকে কাঠগড়ায় তুলে সুর চড়াচ্ছে রাজ্য বামফ্রন্ট নেতৃত্ব, সেই সময় মেমারীর করন্দা গ্রামে সিপিএমের পৈশাচিক সেই হত্যালীলার ঘটনায় নতুন করে সুপ্রীম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে দিয়ে রায় পুর্নবিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর এতেই রীতিমত সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছে খোদ সিপিএম। 

১৯৯৩ সালের ৩১ মে, সকাল ৯টা। তার আগের দিন রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেই সময়ে সিপিএমের স্বজনপোষণ,দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন করন্দা, খাঁড়গ্রামের সিপিএমের একাংশ। বিশেষ করে খোদ করন্দা গ্রামের সমবায়ের দুর্নীতি নিয়ে দলেরই একাংশ রীতিমত সরব হওয়ায় এবং সিপিএমের সেইসময়কার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতৃত্বকে এব্যাপারে বারবার জানালেও কোনো ফল না পাওয়ায় দলের এই বিক্ষুব্ধরা সিপিআইএমএলের সঙ্গে যুক্ত হয়। আর ১৯৯৩ সালের ওই পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইণ্ডিয়ান পিপলস্ ফ্রণ্টের ব্যানারে (যদিও নির্দল হিসাবেই)তারা প্রার্থী দেন।

সিপিআইএম(এল) এর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা কার্তিক পাল জানিয়েছেন,পূর্ব বর্ধমান জেলায় তাঁরা প্রায় ১০০-রও বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছিলেন। করন্দা গ্রামের ৩টি আসনে তাঁরা কার্যত জয়লাভও করেছিলেন। কিন্তু সিপিএমের তৎকালীন নেতৃত্ব মারধোর করে তাদের তাড়িয়ে দিয়ে দখল নেয় নবস্থা ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরের দিন সকালে আইপিএফের সদস্যরা বাদল মালিকের বাড়িতে বসে মিটিং করছিলেন। হটাতই গ্রাম জুড়ে রটে যায় স্থানীয় সিপিআইএম নেতা ভানু হাতি কে গলা কেটে খুন করে দেওয়া হয়েছে। আর অভিযোগের তীর ছিল সিপিআইএম(এল) এর দিকে। এরপরই কয়েকশ সশস্ত্র সিপিএমের বাহিনী গোটা পূর্ব পাড়াকে ঘিরে ফেলে। একের পর এক বাড়িতে  আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। বাদল মালিকের বাড়িতেও লাগিয়ে দেওয়া হয় আগুন। আগুনের লেলিহান শিখা থেকে বাঁচতে বাড়ি থেকে বের হতেই দিলীপ পাকড়ে, সোম কোঁড়া, হীরু মালিক, সাধন নায়েককে একের পর এক কুপিয়ে, পিটিয়ে খুন করে পা ধরে টানতে টানতে নিয়ে এসে মৃতদেহগুলিকে জড়ো করা হয় পূর্ব পাড়ার রাস্তার ওপর। হাতের কাছে যাদের সেদিন পেয়েছে সিপিএমের সশস্ত্র বাহিনী তাদেরই মারা হয়েছে। বাদ যায়নি মহিলা থেকে শিশুরাও। টাঙির কোপ বাঁচিয়ে বাদল মালিকের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ছুটে পালাতে চেয়ে পুকুরে ঝাঁপ মেরেছিলেন মানিক হাজরা। পুকুরের একপাড় থেকে সাঁতরে ওপারে উঠতেই তাঁর অণ্ডকোষ কেটে নিয়ে মলদ্বার দিয়ে লোহার রড ঢুকিয়ে নৃশংস্যভাবে খুন করা হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা - টানা ৪ ঘণ্টা ধরে পৈশাচিক উল্লাস চালানোর পর ঘটনাস্থলেই ৫জনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান রতন মল।

 
সিপিআইএম(এল) এর বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য শ্রীকান্ত রানা জানিয়েছেন, এই ঘটনায় বাদল মালিকের বৌদি মেনকা মালিক মেমারী থানায় অভিযোগ করেন।মামলা করা হয় বর্ধমান আদালতে। মোট ৮৪জনের নামে অভিযোগ দায়ের হলেও পুলিশ শেষ পর্যন্ত ১৭জনের নামে ফাইনাল চার্জসিট পেশ করে।  ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের অনেকেই মারাও গেছেন। কিন্তু সুবিচার মেলেনি।পরে মামলা করা হয় হাইকোর্টে। কিন্তু সেখানেও মেলেনি সুবিচার। এরপরই ২০০৯ সালে তাঁরা সুপ্রীম কোর্টে মামলা করেন। গত মঙ্গলবার সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিদ্বয় এন ভি রামানা এবং মোহন এম সান্তনাগৌড়ার বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে দিয়ে পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দিয়েছেন। আর তাতেই আশার আলো দেখছেন নিহত ও আহতদের পরিবার। তাঁরা চাইছেন উপযুক্ত শাস্তি হোক দোষীদের। 
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});