ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান:এইচআইভি আক্রান্ত না হওয়া সত্ত্বেও গ্রামবাসীদের মিথ্যা সন্দেহের জেরে স্কুলের ভর্তি হতে পারল না দুই শিশু। ঘটনাটি ঘটেছে বর্ধমানের ঝিঙুটি গ্রামে। মঙ্গলবার হোমের বাসিন্দা ওই দুই শিশুকে স্কুলে ভর্তি করতে গেলে গ্রামবাসীদের প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে শেষ পর্যন্ত ফিরে আসতে হয় প্রশাসনিক কর্তাদের।
এব্যাপারে জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখার্জ্জী জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের নির্দেশ অনুসারে মঙ্গলবার আসানসোল-বর্ধমান সেবা কেন্দ্রের অধীন চেতনা হোমের দুটি শিশুকে ঝিঙুটি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করাতে যান। কিন্তু শিশুদুটি এইচআইভি আক্রান্ত এই দাবিতে গ্রামবাসীরা স্কুলে তাদের ভর্তি করতে বাধা দেয়। এমনকি তাঁদের ঘেরাও করে তীব্র বিক্ষোভ জানাতে থাকে। উত্তেজিত গ্রামবাসীদের ক্ষোভের আঁচ থেকে বাঁচতেই তাঁরা শিশুদুটিকে সেদিন ভর্তি না করে চলে আসেন।
প্রসঙ্গত,চেতনা হোমে সাধারণত এইচআইভি আক্রান্ত মেয়েদের রাখা হয়। ২০১৪ সালে এই হোমটি স্পেশাল এডাপশন এজেন্সী বা সা-এর দায়িত্ব পেয়েছে। এর পর থেকেই সেখানে সাধারণ বাচ্চাদেরও
রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেই সাধারণ বাচ্চাদের মধ্যেই দুটি শিশুর স্কুলে ভর্তির বয়স হওয়ায় তাদের
ঝিঙুটি প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করতে যান জেলা প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু গ্রামবাসীদের সন্দেহ ওই দুটি শিশুও এইচআইভি আক্রান্ত।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, ২০১১ সালেও একজন এইচআইভি আক্রান্ত শিশুকে এই স্কুলে ভর্তির চেষ্টা করা হয়েছিল। তখনও তাঁরা বাধা দিয়েছিলেন। তাঁরা চাননা এই স্কুলে কোনো এইচআইভি শিশু পড়ুক। তাদের হুঁশিয়ারি, প্রশাসন জোর করে এই স্কুলে শিশুদের ভর্তির চেষ্টা করলে তাঁরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেবেন। যদিও ঝিঙুটি এলাকার তৃণমূল নেতা অভিজিত সোম জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের দাবী মেনে আলোচনা করেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখার্জ্জী জানিয়েছেন,ওই শিশুরা আদৌ এইচআইভি আক্রান্ত নয়। তিনি জানান,বিগত ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার বিভ্রান্তি এড়াতে গত ৬ ফেব্রুয়ারী স্কুলেই এ নিয়ে একটি আলোচনা সভাও করা হয়। আর তারপরই এদিন দুটি শিশুকে ভর্তি করতে নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিন প্রশাসনিক কর্তাদের দলে ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের স্কুল পরিদর্শক (পশ্চিম চক্র)
বিদ্যাপতি পতি। তিনি বলেন এদিনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এব্যাপারে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তাদের কাছে তিনি রিপোর্ট দিচ্ছেন।জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি অচিন্ত্য চক্রবর্তী জানিয়েছেন, তিনি এসআই-এর কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এইচআইভি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি যে কোনও প্রচারই যে সাধারণ মানুষের মধ্যে থেকে কুসংস্কার দূর করতে পারেনি, এদিনের ঘটনায় তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল।