ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,খণ্ডঘোষ:মিথ্যা অভিযোগে রাতের অন্ধকারে কোনো নোটিস ছাড়াই পুলিশ বাড়ি বাড়ি ঢুকে ভাঙচুর,অত্যাচার করছে। এমনকি মহিলাদের গায়েও হাত তোলা হচ্ছে। বাড়ির পুরুষ মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে ডাকাতি কিম্বা আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। মঙ্গলবার এই সমস্ত অভিযোগে রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ব বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ থানার শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের রূপসা গ্রাম।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ সোমবার গভীর রাতে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ রূপসা গ্রামে ঢুকে তিনজন গ্রামবাসীকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। আর এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে দামোদর থেকে বালি তুলে গ্রামের উপর দিয়ে আসা সমস্ত ট্রাক ও লরির যাতায়াত বন্ধ করে দেয় তারা।সারে সারে দাঁড়িয়ে পরে প্রায় শ'দুয়েক গাড়ি। কুমিরখোলা,রূপসা,নাড়িচা,কাঁটাপুকুর সহ বেশ কয়েকটি বালিঘাট থেকে বালি তুলে বেরোবার আগেই সমস্ত গাড়িকে আটকে দেওয়া হয়। গ্রামবাসীরা দাবি করতে থাকে পুলিশকে নিঃশর্তে ধৃতদের মুক্তি দিতে হবে, ওভারলোড করে বালির গাড়ি গ্রামের রাস্তা দিয়ে চলাচল করা যাবে না, দ্রুত বেহাল রাস্তার মেরামত করতে হবে ইত্যাদি। বেশ কয়েকঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করার পর খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এদিকে এদিনই সমস্ত বিষয় জানিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন গ্রামবাসীরা।
গ্রামবাসী সন্দীপ পান, সুলতা চক্রবর্তী, খুদু রুইদাস প্রমুখরা জানিয়েছেন, ২০১১ সাল থেকে এই এলাকায় বালিঘাটগুলি তৈরী হয়। একসময় বেশিরভাগ ঘাটই অবৈধ ভাবে চলত। যদিও বর্তমানে এই ঘাটগুলির মধ্যে অনেক ঘাটই বৈধতা পেয়েছে। তবু এখনও ঘুরপথে বেআইনি ভাবে বালি উত্তোলন চলছে। কার্যত স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের একাংশের মদতে বালি মাফিয়ারা এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের আরও অভিযোগ, কয়েকবছর আগে রূপসা এলাকার বালিঘাট চালাবার জন্য যোগেন্দ্র বর্মন স্থানীয় কিছু মানুষকে লোডিংয়ের কাজে নিযুক্ত করেছিল। অভিযোগ,পরে এই সমস্ত লোকেদের বিরুদ্ধেই থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেন তিনি।গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন,পুলিশের সঙ্গে দহরম মহরম থাকায় যোগেন্দ্র বর্মন গ্রামবাসীদের অজান্তে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে।আর তারপর থেকেই পুলিশ মাঝে মধ্যেই গ্রামের নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে তুলে নিয়ে গিয়ে ডাকাতি বা অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যেই ২৩জন গ্রামবাসীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সোমবার রাতেও বাড়়ি বাড়ি হামলা চালিয়ে পুলিশ ৩জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকেই কয়েকশো গ্রামবাসীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে খবর পেয়ে খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ গ্রামে এসে গ্রামবাসীদের দাবিগুলি বিবেচনা করার আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
এদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তিনি যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।
জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও এই ধরণের কোনো ঘটনার খবর তিনি শোনেন নি বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়াল।