সৌরীশ দে,বর্ধমান: পুরানো সেই দিনের কথাকে স্মরণ করতেই আবার একসাথে জড়ো হওয়া। প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছে আরও একবার ঝালিয়ে নেওয়া-কেমন ছিল তাঁদের সময়কার বিশ্ববিদ্যালয়। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ জন প্রাক্তনীর স্মৃতিতে এখনও ভাস্বর সেদিনের বনবীথিকায় সোনালী বিকেলগুলো। শীতের বিদায়বেলায় স্মৃতিকে বেদনাবিধুর না করে 'ফিরে দেখা'-র মাধ্যমে তাকে স্মৃতিমধুর করে রাখলে কেমন হয়। সেই সুখ-স্মৃতিকে রোমন্থন করতেই রবিবার নিজেদের উত্তরসূরীদেরও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা, অর্থাৎ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সময়কার ছাত্র পরিষদের সমর্থকরা। ৮০-র দশকে বামেদের ভরা রাজত্বে এসএফআই-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের গৌরব গাথা নতুন প্রজন্মকে যে শোনানো প্রয়োজন। লাল চোখের চাউনিতে ভয় না পেয়ে বাবা-মায়ের সেদিনের লড়াই সন্তানদের মধ্যেও সঞ্চারিত হোক চান তাঁরা।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব প্রাক্তনীদের ভিড়ে এদিন ছিলেন রাজ্যের একমাত্র গর্ভনমেণ্ট আর্ট কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ড.শ্যামসুন্দর কুণ্ডু, হুগলীর বেঙ্গাই কলেজের অধ্যক্ষ ড.পরমার্থ ঘোষ, শ্যামসুন্দর কলেজের অধ্যক্ষ গৌরীশংকর বন্দোপাধ্যায়, বীরভূম সরকারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার সাহা, কাজী নজরুল কলেজের নিয়ামক ভাগবত মাজি, পুরুলিয়ার সিধু কানহু বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চীফ লাইব্রেরিয়ান প্রণব হাজরা প্রমুখ।পুনর্মিলনের আঙিনায় উপস্থিত হয়েছিলেন বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, হুগলী, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগণা ছাড়াও উত্তরবঙ্গ থেকেও কয়েকজন।এদের একসাথে মেলালেন যিনি, তিনি 'ফিরে দেখা' র আহ্বায়ক বর্তমানে বর্ধমান আদালতের আইনজীবী তথা প্রাক্তন ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক মণ্ডল। তিনি জানালেন ৫৫ থেকে ৬৫-র দিকে যাওয়া 'ফিরে দেখা'-র এই সদস্যদের মিলনমেলার এটা দ্বিতীয় বছর। অবশ্য পুরোনদের সকলকে পাওয়া যায়নি কারণ শুধু কাজ থেকেই নয়, জীবন থেকেও অবসর নিয়েছেন প্রায় ১৭ জন। তবু যাঁরা আছেন স্মৃতিকে তাঁরাই বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
প্রাক্তনীদের নস্টালজিয়ায় এখনও ভর করে মোরাম বিছানো বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ধুলোর পথ, অজস্র গাছ-গাছালি, ভরা পুকুর, স্বচ্ছ পরিখা আর ডিঙি নৌকো। এখানে-ওখানে গাছের তলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের গোল জটলায় নানা বিষয়ের উত্থাপন আর জোর গলায় বিতর্ক-বিবাদ। কিন্তু এত বছর পর এদিন তাঁদের গলায় ছিল শুধু হারিয়ে যাওয়ার হতাশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেহারাটা কেমন যেন অচেনা মনে হয় তাঁদের কাছে। চারিদিকে শুধু কংক্রিটের দেওয়াল ,হারিয়ে গেছে গাছের ছায়া আর কাঁকুড়ে লাল মাটির রাস্তা, কালো পিচের সর্পিল পায়ে চলার পথটাই যেন গিলে খেতে আসে। সবুজের আবছায়া আলো আঁধারিতে সেদিনের বিশ্ববিদ্যালয়ের মন কেমন করা পরিবেশের এই পরিবর্তনে হৃদয় ব্যথিত হয়। আজ পুরাতনীরা সব একসাথে। তবু ভরিল না চিত্ত।
'ফিরে দেখা'-র প্রাক্তনীদের তাই সিদ্ধান্ত -রাজ আমলের তথা রাজ পরিবারের প্রদত্ত স্থাপত্যগুলি সংরক্ষণ করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গোলাপবাগ ক্যাম্পাসের পুরনো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানানো হবে উপাচার্যের কাছে। তারা জানিয়েছেন প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে একটি পত্রিকা এবং নিজস্ব ওয়েবসাইটও চালু করা হবে।