ফোকাস বেঙ্গল নিউজ ডেস্কঃ জীবন থাকতে জন্মভূমিতে ফেরা হয়নি কোনোদিন। মৃত্যুর পরেও হলনা। অবিভক্ত পরাধীন ভারতের বার্মা মুলুকের কাচিন প্রদেশের কন্যা কৃষ্ণা জীবনের শেষ শ্বাসটি নিলেন কোলকাতার মাটিতে-স্বাধীন বাংলার বাতাস থেকে। শেষ হল বাংলার রুপোলি দুনিয়ার খ্যাতনামা অভিনেত্রী সুপ্রিয়া চৌধুরী নামের অধ্যায়টি।
বাবার হাত ধরে বার্মায় শিশুবয়সে সুপ্রিয়ার যে সাংস্কৃতিক জীবনের সূচনা, জীবনের সায়াহ্নে তার সমাপ্তি ঘটেছে বর্ধমানের উৎসব ময়দানে। ২৩ ডিসেম্বর ,২০১৭-বর্ধমান পৌর উৎসবের উদ্বোধনী দীপশিখাটি জ্বালিয়ে ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্র জগতের এই প্রবীণা। তখন কেই বা জানত ক'দিন বাদেই নিভে যেতে চলেছে তাঁর নিজের জীবন-প্রদীপটিই। সেদিন বড় খুশি হয়ে বলেছিলেন বর্ধমানের সঙ্গে তাঁর সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গভীর। বোঝা গেল এতটাই গভীর যে ব্রহ্মদেশের কৃষ্ণার শেষ সাংস্কৃতিক শব্দগুলি উচ্চারিত হল বর্ধমানেই।
কাচিনের রাজধানী মিয়িৎকিনা শহরের আইনজীবী গোপালচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যার কর্মজীবনের পথচলাটি শুরু হয়েছিল যে কোলকাতায়, স্বাধীন ভারতের ২০১৮-র প্রজাতন্ত্র দিবসের শুরুতেই তাল কেটে গেল তাঁর কর্মভূমি সেই কোলকাতার। সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন সকলের প্রিয় বেণুদি। ২৬ জানুয়ারীর আবেগ আর সুপ্রিয়া চৌধুরীর প্রয়াণের বেদনা মিলেমিশে গেল বাংলার বাতাসে।
১৯৩৫ সাল থেকে ২০১৮ অবধি জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুপ্রিয়া চৌধুরী ছিলেন বর্ণময় ও লড়াকু একটি চরিত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে জ্বলতে থাকা বার্মার নাবালিকা কৃষ্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘর ছেড়েছিলেন বাঁচার আশায়। দুর্গম পথের শেষে জীবনের পথ খুঁজে পেয়েছিলেন বাংলাতে। বাবার নির্দেশনায় কয়েকটি নাটকে অভিনয়ের অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে পর্দায় অভিনয়-জীবনের শুরুটা হল 'বসু পরিবার' ছবিতে। সালটা ছিল ১৯৫২। তারপর থেকেই বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ পেল অসামান্য এক শিল্পী সুপ্রিয়া চৌধুরীকে। ঋত্বিক ঘটক পরিচালিত 'মেঘে ঢাকা তারা’-র নীতা বুঝিয়ে দিল সে সত্যি করেই বাঁচতে চায়। বাঁচতেই সে এতদূর দেশে পাড়ি দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন ,এদিন দুপুর সাড়ে তিনটে থেকে সন্ধ্যে সাড়ে ছ'টা পর্যন্ত রবীন্দ্রসদনে শায়িত থাকবে অভিনেত্রীর মরদেহ। শিল্পী থেকে সাধারণ মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন। তারপর কেওড়াতলায় গান স্যালুটের মাধ্যমে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
সুপ্রিয়া চৌধুরী চলে গেলেন। কিন্তু চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে থাকবে বনপলাশীর বেণী দোলানো সেই মেয়েটি, যে বিলম্বিত লয়ের গায়িকা আবার কখনও এয়ার হস্টেস কখনও বা নর্তকী আম্রপালি হয়ে।