Headlines
Loading...
বর্ধমানে সরকারি প্রাথমিক বঞ্চিত,সুবিধা ভোগ করছে বেসরকারি স্কুল।পরিদর্শনে কমিশন।

বর্ধমানে সরকারি প্রাথমিক বঞ্চিত,সুবিধা ভোগ করছে বেসরকারি স্কুল।পরিদর্শনে কমিশন।




ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: খোদ বর্ধমান শহরের প্রশাসনিক কর্তাদের নাকের ডগাতেই বছরের পর বছর ধরে চলছে সরকারী স্কুলের নামে বেসরকারী স্কুল। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সরকারী স্কুলের লোগোও। অথচ তা নিয়ে এতকাল কেউ কোনো উচ্চবাচ্যও করেনি। অবশেষে ১৯৮২ সাল থেকে এভাবে সরকারী স্কুলের নাম ও লোগো ব্যবহার করে চলে আসা বর্ধমান শহরের সিএমএস হাই স্কুলের কেজি বিভাগকে সতর্ক করে দিয়ে গেলেন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের দুই সদস্য সৌমিত্র রায় এবং সাকিলা সুলতানা শামস্। বদলে নিতে বলে গেলেন তাদের স্কুলের নামও। আর তা নিয়েই মঙ্গলবার ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হল শহর জুড়ে। এরই পাশাপাশি এদিন এই প্রতিনিধিরা গলসীর বেলগ্রামেও একটি প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শন করেন।
এদিন পরিদর্শনের বিষয়ে বর্ধমান সি. এম. এস. হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ মহেশ্বর হেমব্রমে জানান, এদিন কমিশনের প্রতিনিধিরা কে জি সেকশন এবং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ইন্সপেকশন করেছেন। হাইকোর্টে একটা মামলাও চলছে। একজন অভিভাবক মামলা করেছেন। ওদের আলাদা পরিচালন সমিতি রয়েছে। এর বেশি তিনি কিছু বলতে পারবেন না।
অপরদিকে, বর্ধমান সি. এম. এস হাই স্কুল (কে. জি. বিভাগ) এর প্রধান শিক্ষক পুলকেশ চৌধুরী এদিন জানান, ওনারা সমস্ত কিছু জানতে চাইছিলেন। সমস্ত কিছু দেখার পর ওনারা সন্তুষ্ট। কোনও সমস্যা হলে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন। পরামর্শও দিয়েছেন। কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা দেখলেন। নাম, লোগো ব্যবহার নিয়ে সাজেশন দিয়েছেন। বলেছেন এরপর ওনারা যেভাবে বলবেন সেভাবে চলবেন। গাইড লাইন দেবেন। তিনি বলেন, ১৯৮২ সাল থেকেই এই নিয়ম চলছে। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি চালায়। সোসাইটি রেজিস্টেশনও রয়েছে তাদের। সোসাইটির নাম বর্ধমান সি. এম. এস স্কুল (কে. জি. বিভাগ)।

অভিভাবক মনোয়ার হোসেন জানান, প্রাচীন স্কুল। ঐতিহ্য আছে। যে সমস্ত সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রাথমিকের পাওয়ার কথা তা পাচ্ছে না। কিন্তু বেসরকারি স্কুল সব পাচ্ছে। এলাকাবাসী এবং অভিভাবকরা মিলিতভাবে মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিল এই অসঙ্গতির কথা । শিশু সুরক্ষা কমিশনকেও জানানো হয়েছিল। অভিভাবকরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশন সহ জেলা প্রশাসনের কাছেও বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই ঘটনা নিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন।তারই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা সরজমিনে পরিদর্শন করে গেলেন।
অভিভাবক চন্দনা দাস, সন্দীপা সাহা রায়, শিব শংকর পাল জানান, স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে ছাত্র ছাত্রীদের বসার চুড়ান্ত অব্যবস্থা। ঠিক মত মিড ডে মিল হচ্ছে না। সরকারী সুযোগ সুবিধা ঠিক মত পাচ্ছে না। একাধিকবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। জেলাশাসককেও জানান হয়েছিল। ড্রেস গ্র্যান্ডের টাকা পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক বিভাগের ছেলেরা পোলট্রি মুরগীর মত থাকে। খেলার জায়গা নেই। অথচ বেসরকারী স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সমস্ত সুযোগ পাচ্ছে। তারা এদিন জানান, অনেক আশা নিয়ে ভর্তি করেছিলেন ছেলেমেয়েদের। ক্লাসরুমের মধ্যেই প্রার্থনা হয়। তালা বন্ধ করে রাখা হয় ছেলেমেয়েদের। অথচ এই প্রাথমিক বিভাগে তথা বর্ধমান সি.এম. এস হাই স্কুল প্রাথমিক বিভাগের ছাত্র সংখ্যা ৫১৯জন। শ্রেণীকক্ষ ৮ টা, শিক্ষক রয়েছেন ১৩ জন। প্রতি ক্লাসের দুটি সেকশন। স্টাফ রুম ১ টি।
প্রাথমিক বিভাগের সহ শিক্ষক অনির্বাণ ইসলাম জানান, শিশু সুরক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা স্কুল দেখতে এসেছিলেন। ছেলেদের বসার জায়গা দেখলেন। ছাত্র বেশি, বসার জায়গা নেই। স্টাফ রুমের অসুবিধা। মহিলা টয়লেট নেই। মিড ডে মিল বসে খাওয়ার জায়গা নেই। বারান্দায় খাওয়ানো হয়। সকালে বেসরকারি স্কুল চলে।  সবই তারা দেখে গেলেন। ছেলেরা বসতে পারেনা। ছোট ছোট রুম। অথচ একই ক্যাম্পাসে বেসরকারী স্কুল চলছে ১৮টি ঘর দখল করে তুলনামূলক কম ছাত্রছাত্রী নিয়ে। সরকারীভাবে প্রাথমিক বিভাগে অনেক কিছুই নেই। সরকারী ভবন, লোগো, নাম সব কিছুই নিচ্ছে তারা। এমনকি সরকার সি এম এস স্কুলকে ফ্রি এডুকেশনের সুযোগ দিয়েছে। বেসরকারী স্কুলটি লাভজনক সংস্থা। অথচ জানা গেছে, এই নামে এই স্থানে থাকার কোনও এক্তিয়ার নেই। সরকারী প্রাথমিক স্কুলটাকে সহানুভূতির সাথে দেখা হয়না। কোথাও যেন বেসরকারী স্কুলকে ভালভাবে চালানোর প্রবনতা থেকে যাচ্ছে। অদৃশ্য কিছু হাত কাজ করছে এব্যাপারে। মূল উদ্দেশ্য, সরকারী প্রাথমিক বিভাগ খারাপ চললে, বেসরকারীটা ভাল চলবে। ইতিমধ্যেই ৫ টা সরকারী এসিআর ফেরত গেছে বাচ্চাদের জন্য। করতে দেওয়া হয়নি। জায়গার অসুবিধা। এখন আবার হাইস্কুল ৮ টা এসিআর পাবে। বিল্ডিং তৈরী হবে। কিন্তু প্রাথমিকের কিছু হচ্ছে না।
                                                                                                                     ছবি - সুরজ প্রসাদ



















(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});