
ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক:২৫ ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন। খ্রিস্টান ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড়দিন। বিশ্বজুড়ে এ নিয়ে জোর কদমে শুরু হয়েছে নানা আয়োজন। পিছিয়ে নেই আমাদের দেশের খ্রিস্টান ধর্মালম্বীরাও। ‘ধর্ম নিজের নিজের,উৎসব সবার’ এ স্লোগান নিয়ে তাদের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মের মানুষও যোগ দিয়েছেন। এই বড় দিনের অন্যতম চরিত্র সান্তাক্লজ।
চলুন জেনে নিই সান্তাক্লজ সম্পর্কে কিছু কথা।
সান্তাক্লজ পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটি কিংবদন্তি চরিত্র। তিনি সেইন্ট নিকোলাস ফাদার ক্রিস্টমাস ক্রিস ক্রিঙ্গল বা সাধারণভাবে ‘সান্তা’ নামে পরিচিত। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী, তিনি ক্রিস্টমাস ইভ বা ২৪ ডিসেম্বর তারিখের সন্ধ্যায় এবং মধ্যরাতে অথবা ফিস্ট ডে বা ৬ ডিসেম্বর তারিখে (সেন্ট নিকোলাস ডে) ভালো ছেলেমেয়েদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে তাদের উপহার দিয়ে যান। এই কিংবদন্তির উৎস ঐতিহাসিক চরিত্র উপহার-প্রদানকারী সেন্ট নিকোলাসের জীবন সংক্রান্ত সন্তজৈবনিক উপাদানসমূহ। গ্রিক ও বাইজানটাইন লোককথাতেও বাসিল অব সিসেরিয়া সংক্রান্ত একই প্রকারের একটি কিংবদন্তির উপাখ্যান বর্ণিত হয়েছে। বাসিলের ফিস্ট ডে বা ভোজদিবস পয়লা জানুয়ারি। এটি গ্রিসে উপহার আদানপ্রদানের দিন।
সেন্ট নিকোলাসের প্রকৃত চিত্রটি ছিল এক বিশপের আলখাল্লা পরিচিত সান্তার চিত্র। কিন্তু আজকের সান্তাক্লজ সাধারণত হন কোনো স্থূলকায়, হাস্যমুখর এবং সাদা-দাড়িবিশিষ্ট ব্যক্তি; তার পরনে থাকে সাদা কলার ও কাফযুক্ত লাল কোট, সাদা কাফযুক্ত লাল ট্রাউজার্স, কালো চামড়ার বেল্ট ও বুটজুতো। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিশিষ্ট ক্যারিকেচারিস্ট ও রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট টমাস নাস্টের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় সান্তাক্লজের এই রূপটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই রূপকল্পের প্রচার ও তার জনপ্রিয়তার প্রসারে সহায়তা করে একাধিক গান, রেডিও, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র। যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে সান্তাক্লজের রূপটি আমেরিকান সান্তার মতো হলেও আমাদের দেশে তিনি ফাদার ক্রিস্টমাস নামেই বেশি পরিচিত।
সান্তাক্লজ-সংক্রান্ত একটি কিংবদন্তি অনুসারে, তিনি সুদূর উত্তরে এক চিরতুষারাবৃত দেশে বাস করেন। আবার সান্তাক্লজ-সংক্রান্ত আমেরিকান উপাখ্যান অনুসারে, তার নিবাস উত্তর মেরুতে। অন্যদিকে ফাদার ক্রিস্টমাসের নিবাস মনে করা হয় ফিনল্যান্ডের, ল্যাপল্যান্ড প্রদেশের কোরভাটুনটুরি পার্বত্য অঞ্চলে। সান্তাক্লজ তার স্ত্রী মিসেস ক্লজ, অসংখ্য জাদুক্ষমতাসম্পন্ন এলফ, এবং আট-নয়টি উড়ন্ত বলগাহরিণের সঙ্গে বাস করেন। অপর একটি উপাখ্যান অনুসারে, সান্তাক্লজ সারা বিশ্বের শিশুদের একটি তালিকা প্রস্তুত করে তাদের আচরণ (‘দুষ্টু’ ও ‘লক্ষ্মী’) অনুযায়ী দুই ভাগে ভাগ করেন। তারপর ক্রিস্টমাস ইভের রাতে তিনি লক্ষ্মী ছেলেমেয়েদের খেলনা, চকোলেট ও অন্যান্য উপহার দেন এবং কখনও কখনও দুষ্টু ছেলেমেয়েদের কয়লা দিয়ে যান। এই কাজ তিনি সম্পন্ন করেন তার কারখানায় কর্মরত এলফ ও তার স্লেজগাড়ির বাহক বলগা হরিণগুলোর মাধ্যমে।
অন্যদিকে, শিশুদের সান্তাক্লজ-সংক্রান্ত বিশ্বাসগুলো শিক্ষা দেওয়ার বিপক্ষেও কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন। কোনো কোনো খ্রিস্টান মনে করেন, সান্টা সংস্কৃতি ধর্মীয় উৎস ও বড়দিনের উদ্দেশ্য থেকে জনসাধারণকে বিচ্যুত করছে। অন্যান্য সমালোচকদের মতে, সান্তাক্লজ-সংক্রান্ত উপকথাটি একটি সুবিন্যস্ত মিথ্যা; এবং যে কোনো পিতামাতার পক্ষেই তাদের ছেলেমেয়েদের এই মিথ্যা অস্তিত্বে বিশ্বাস স্থাপনে শিক্ষাদান অনৈতিক। আবার কেউ কেউ সান্তাক্লজকে বড়দিনের ছুটির বাণিজ্যকরণের প্রতীক হিসেবে তার বিরোধিতা করে থাকেন। তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট
ছবি - সুরজ প্রসাদ 
