ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: জটিল রোগে আক্রান্ত এক প্রসূতির ঝুঁকিবহুল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করিয়ে সাফল্যের হাসি হাসলেন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।ট্রেটালজি অফ ফ্যালটে আক্রান্ত ওই গৃহবধু ও তাঁর সদ্যোজাত সন্তান বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন বলে হাসপাতাল সুপার ডা. উৎপল দাঁ জানিয়েছেন।
ট্রেটালজি অফ ফ্যালটে আসলে কি ধরণের রোগ?
এই ধরণের রোগে আক্রান্ত রোগীর হৃদযন্ত্র থেকে ফুসফুসের ধমনীতে রক্ত সরবরাহের ত্রুটি থাকে। ফলে সারা শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। এর ফলে রোগীর সারা শরীর নীল হয়ে যায়। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. উৎপল দাঁ জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরের বাসিন্দা কাজল ব্যাপারী জন্মের পর থেকেই হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৪ সালে ১২ বছর বয়সে তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারিও হয়। তারপর থেকেই তিনি নিয়মিত চিকিৎসাধীন ছিলেন।বছরখানেক আগে পেশায় রাজমিস্ত্রী শুভঙ্কর ব্যাপারীর সঙ্গে কাজলের বিয়ে হয়। তিনি অন্তঃসত্ত্বাও হন। এরপর বর্ধমান হাসপাতালেই তিনি প্রসুতিকালীন চিকিৎসা চালাচ্ছিলেন।
ডা. দাঁ জানিয়েছেন,শারীরিক এই জটিল সমস্যা নিয়েই কাজলদেবী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ায় তাঁকে ও তাঁর সন্তানকে সুস্থ রাখাটাই চিকিৎসকদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। কোনো সমস্যা ছাড়া সুস্থ ভাবে সন্তানের প্রসব করানোটাই মূল লক্ষ্য হিসাবে নেয় কাজলের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকেরা। সুপার জানান,বর্ধমান হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ডা. অতীন হালদারের তত্ত্বাবধানে কাজলের চিকিৎসা চলতে থাকে। পরামর্শ নেওয়া হয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদেরও। এরপর ডা. অতীন হালদার এবং হাসপাতালের সিসিইউ ইনচার্জ ডা. সৌমেন মণ্ডলের নেতৃত্বে প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পার্থসারথী মিত্র, ডা. সুপ্রতীক বাসু, ডা. অভিজিত পাহাড়ী, অ্যানাস্থেসিওলজিষ্ট ডা. জয়ন্ত চক্রবর্তী এবং ডা. দেবব্রত ঘোষকে নিয়ে তৈরী করা হয় একটি মেডিকেল বোর্ড।
১ নভেম্বর কাজলকে প্রসূতি বিভাগে ভর্তি করা হয়। নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এই বোর্ড। ৩ নভেম্বর কাজলের সিজার করা হয়। আর সাফল্যের সঙ্গেই প্রায় আড়াই কেজি ওজনের সুস্থ সন্তানের জন্ম দেয় জটিল রোগে আক্রান্ত কাজল।
ডাঃ দাঁ জানিয়েছেন, এই ঝুঁকিবহুল অস্ত্রোপচারের পরও কাজল ও তাঁর সদ্যোজাত শিশু সুস্থ ও বিপদমুক্ত আছেন।

