পল মৈত্র,দক্ষিণ দিনাজপুরঃ অপেক্ষার দিন শেষ। রাট পেরোলেই দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার শতাব্দী প্রাচীন বোল্লা পুজার আরাধনায় মাতবে জেলাবাসী। মাত্র ৪ দিনের জন্য সেই অপেক্ষার জোয়ারে গা ভাসাতে ব্যাস্ত জেলাসহ রাজ্যের অন্যান্য প্রান্তের ভক্তরা। দক্ষিন দিনাজপুর জেলার বোল্লা এলাকায় আনুমানিক ৪০০ বছরেরও অধিক ধরে রাস পূর্ণিমার তিথিতে জাগ্রত মা বোল্লার পুজা হয়ে আসছে। প্রায় ৪০ হাত লম্বা রক্ষা কালী মাতার পুজা হয় তন্ত্র মতে। হাজার হাজার ভক্তগনের সমারোহে প্রতিবছর রাস পূর্ণিমার তিথিতে শুক্রবার এই পুজা হয়ে থাকে। পুজাতে মানতের পাঠাবলী হয় কয়েক হাজার। অনেকে আবার পায়রাও দিয়ে থাকেন। পুজা ১ দিনে হয় আর তাকে ঘিরে ৪ দিনের জন্য এক বিশাল মেলা বসে।
৫১২ নং জাতীয় সড়কের পাস দিয়ে উত্তর দিকে ৩ কিলোমিটার ভিতরে এই বোল্লা মাতার বিশাল মন্দির রয়েছে। রাস্তা থেকে টোটো বা ভ্যান ধরে মন্দিরে পৌছানো যায়। মন্দির এলাকায় প্রবেশ মাত্রই একটি আধ্যাত্মিক অনুভব মনকে শিহরিত করে তোলে। ভক্তদের মানত করা অলঙ্কারে বোল্লা কালীকে সাজানো থাকে বছরের এই ৪টি দিন। প্রচন্ড কড়া প্রহরায় মায়ের পুজা হয়। মন্দিরের পাশে সারিবদ্ধ ভাবে মানতের জন্য বিভিন্ন উচ্চতার কালী প্রতিমাও পুজা হয়। রাত ভর পুজো চলে। সাথে চলে অজস্র পাঁঠা বলি । মানুষ তাদের মানতের জন্য সাধ্য মতন কেনা পাঁঠা মা বোল্লার নামে উৎস্বর্গ করে।
অন্যদিকে, মেলাকে কেন্দ্র করে এই কদিন আশপাশের বহু মানুষ হাজির হয় নানান রকমারি সামগ্রীর পসরা নিয়ে। বিভিন্ন ধরনের দোকানও বসে এই মেলায়। তবে ভিড়ের আড়ালেই অবাধে চলতে থাকে যেখানে সেখানে জুয়ার ঠেক, আর মদের আসর। স্বাভাবিকভাবেই মদ্যপদের উৎপাত এই মেলাতেই লেগেই থাকে। যদিও সতর্ক পুলিশ প্রশাসন কোনোভাবেই রেয়াত করে না এই উৎশৃঙ্খলাকে। অসামাজিক কার্যকলাপ আটকাতে মেলা প্রাঙ্গনে কয়েক হাজার সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়। যদিও কড়া নিরাপত্তার সব রকম ব্যবস্থা প্রশাসন গ্রহণ করলেও তা ফাকি দিয়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিবছরই ঘটেই যায়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রচুর সাদা পোশাকের পুলিশ ও বিশেষ বাহিনী তাই মোতায়েন থাকে মেলা প্রাঙ্গনে।
মা বোল্লার পুজাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ধুম পড়ে যায়। বোল্লা পুজার জন্য বড় সাইজের ১-৩ কিলো অবধি কদমা বিক্রি হয়. পাশাপাশি পুজার প্রসাদের জন্য বিভিন্ন আকৃতির সুস্বাদু রঙিন বাতাসাও বিক্রি হয়। মেলার ৪দিন জেলার বাস, ছোটো গাড়ি গুলি মেলায় আগত ভক্তদের নিয়ে যাওয়া আসা করে। কলকাতা থেকে জেলার বালুরঘাট গামী ট্রেনগুলির স্টপেজ না থাকলেও এই কয়েকদিন বোল্লাতে স্পেশাল স্টপেজ দেয়, শুধুমাত্র ভক্তদের জন্য। মঙ্গলবার মা বোল্লার বিসর্জন।
জনশ্রুতি যে,মা বোল্লা বিসর্জনের জন্য নাকি জলাধারের সিড়ি থেকে নামতে চায়না। এই পুজা আর মেলা ঘিরে এখন জেলা জুড়ে ব্যাস্ততা চোখে পড়ার মতন। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।


