সৌরীশ দে,বর্ধমান: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক অন্য নজির। বর্ধমান শহর থেকে কিছুটা দূরে বর্ধমান থানার অধীনেই রয়েছে আলমপুর গ্রাম। মুসলিম অধ্যুষিত এই গ্রামেই সেই নবাব আমল থেকে চলে আসছে হিন্দু মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের যৌথ ভাবে নবান্ন ও অন্নপূর্ণা উৎসব পালনের রীতি।
আর এই পূজোকে কেন্দ্র করে আলমপুর গ্রামের হিন্দু -মুসলিম সকলেই মেতে উঠেছেন মাঠের নতুন ফসলকে ঘরে তোলার এই অন্নপূর্ণা পূজো এবং নবান্ন উৎসবে।
উল্লেখ্য,প্রাচীন শাস্ত্র মতে শনিবার থেকে শুরু হল নতুন বাংলা বছর। এই অঘ্রাণ মাস জুড়েই গ্রাম বাংলায় বিভিন্ন দিনে পালিত হবে নবান্ন বা নতুন ধান ওঠার উৎসব। সম্পদের দেবী লক্ষী বা অন্নপূর্ণা পূজিত হবেন এই উৎসবে। তাই আলমপুর গ্রামের হিন্দু -মুসলিম সকলেই মেতে উঠেছেন নবান্ন উৎসব এবং অন্নপূর্ণা পূজোয়। এই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি,সেই নবাব আমল থেকেই চলে আসছে এই রীতি। ধর্মের বিভাজনকে দূরে সরিয়ে রেখে গোটা গ্রামের সমস্ত বাসিন্দারাই টানা ৪দিন ধরে চলা এই উৎসব উপলক্ষ্যে মেতে ওঠেন নানান অনুষ্ঠানে।
আলমপুর গ্রামের মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা এবং এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য তথা কমলপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সেখ মোয়াজ্জেম আলি ওরফে সেখ আপেল জানিয়েছেন, লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে নবাব আমল থেকেই এই প্রথা চলে আসছে আলমপুর গ্রামে। আলমপুর গ্রামের মালি পাড়ায় ঘরে ঘরে (হিন্দু পাড়া) অন্নপূর্ণার পুজো হয়। কিন্তু মুসলিম পাড়ায় কোনো পুজো না হলেও পুজো পরবর্তী সমস্ত আচার অনুষ্ঠানই পালিত হয় গোটা গ্রামের সকলের সঙ্গে। গ্রামবাসীরা এদিন সকাল থেকে উপোষ করে থাকে। মাঠ থেকে চার আঁটি ধান কেটে তাকে শুদ্ধ নতুন কাপড় মুড়িয়ে নিয়ে আসে বাড়িতে। যাঁরা ধান কেটে নিয়ে আসেন তাঁরা সেই সময় কোনো কোনো কথা বলেন না। কথিত আছে এটাই রীতি। এরপর বাড়িতে সেই ধান নিয়ে এসে তা থেকে আতপ চাল বার করা হয়। তারপর গোটা গ্রামের বাসিন্দারাই সেই আতপ চাল দিয়ে তৈরী করেন পায়েস সহ অন্যান্য খাবার। নৈবিদ্য হিসাবে তা দেওয়া হয় অন্নপূর্ণার চরণে।
সেখ আপেল জানিয়েছেন, মুসলিমপাড়ায় অন্নপূর্ণাদেবীর পুজো না হলেও এই নতুন ধান দিয়ে পায়েস বানানো সহ বাকি অনুষ্ঠান সবই পালন করা হয়। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে গ্রামে বসে মেলা,যাত্রার আসর। আসলে এই একটা উৎসবই সারা বছরের জন্য এই দুই সম্প্রদায়ের সম্প্রীতির বন্ধনকে আরও মজবুত করে দেয় বলে জানিয়েছেন মালি পাড়ার বাসিন্দারা।