সৌরীশ দে ,পূর্ব বর্ধমান: আধুনিকীকরণ,প্রযুক্তিগত পরিবর্তন,গতিশীল সমাজ ব্যবস্থা সর্বোপরি অর্থনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে পরিবারে তথা সমাজে বয়স্ক ব্যক্তিদের গুরুত্ব ও মূল্য দিন দিন কমছে। জীবনের শেষ কয়েকটা বছর নিশ্চিন্তে সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতি মুহূর্তে সমঝোতা করতে হচ্ছে বয়স্ক বাবা মায়েদের। মানসিক ও শারীরিক এই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই সংসারের মায়া ত্যাগ করে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে। আর ঠিক এই কারণেই আজকের সমাজে হু হু করে বাড়ছে ওল্ড এজ হোমের সংখ্যা। বাড়ছে ছেলে মেয়েদের কাছ থেকে নির্যাতিত, নিপীড়িত, অবহেলিত আর বঞ্চনার শিকার বাবা-মায়ের সংখ্যাও।
এই অবস্থায় সমাজে অবহেলিত এই ধরণের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পাশে এসে দাঁড়ালো বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও বর্ধমান রাজ কলেজের প্রায় ২০০ জন ছাত্রছাত্রী। যাদের মধ্যে প্রায় ১৭৫জন ছাত্রী এবং ২৫জন ছাত্র। উদ্যোগের মূলে রয়েছেন এই সব ছাত্রছাত্রীদের গৃহ শিক্ষক প্রলয় মজুমদার।
তিনি জানিয়েছেন, ধারাবাহিক পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মানবিক হওয়ার আবেদন জানিয়ে আসছেন।কেবল পুঁথিগত পড়াশোনা করলেই হবে না। পড়াশোনা করে নিজের ভবিষ্যত গড়াটাই বড় কথা নয়, সব থেকে বড় কথা যে সমাজ থেকে আমি সবটুকু নিঙড়ে নিচ্ছি সেই সমাজের জন্যও আমি কিছু ফিরিয়ে দিতে পারছি
কিনা ।
তিনি জানিয়েছেন, এই বিষয়টি নিয়েই তিনি তাঁর ছাত্রছাত্রীদের মানবিক হওয়ার উপদেশ দিয়ে আসছেন। সমাজের সেই সমস্ত মানুষগুলো যাঁরা তাঁদের সন্তান-সন্ততিদের বড় করার জন্য নিজের সারাটা জীবন প্রাণপাত করেছেন,আজ তাঁরাই বড় অবহেলিত। সেই বৃদ্ধ মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়ানোর আবেদন রেখেছেন প্রলয়বাবু তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছে।
আর শিক্ষকের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে গত প্রায় ৪ বছর ধরেই ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের সামর্থ্য নিয়ে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছেন।
ছাত্রী সুনন্দা রায়,শামীমা খাতুনর,সুজয় রায়রা জানিয়েছেন, প্রলয়বাবু গত ১০ বছর ধরে নিউট্রেশন নিয়ে গৃহশিক্ষকতা করছেন। আর গত ৪ বছর ধরে তাঁরই অনুপ্রেরণায় তাঁরা একটু একটু করে এই সামাজিক কাজ করছেন।রবিবার একদিকে রাখী উত্সব, অন্যদিকে ৭০তম স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে গোলাহাট এলাকার প্রায় ২২জন বৃদ্ধ বৃদ্ধাকে ৫কেজি চাল, নতুন পোশাক এবং মিষ্টি তুলে দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের হাতে রাখী পড়িয়ে দেন ছাত্রীরা। সুনন্দা জানিয়েছেন, এর আগেও তাঁরা বর্ধমান রেল ষ্টেশনে পথশিশু এবং দুঃস্থ বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের হাতে এই সহায়তা তুলে দিয়েছেন।আগামী দিনগুলোতেও আমাদের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে এই ধরণের অসহায়,অবহেলিত মানুষদের পাশে আমরা বার বার দাঁড়াবো। এটাই আমাদের শিক্ষা,সংকল্প।


