কেকে মল্লিক,কলকাতা: জন্ম শতবর্ষে পদার্পন করছেন কিংবদন্তি চিত্রপরিচালক সত্যজিৎ রায়। ১৯২১ সালের ২মে কলকাতার গড়পার রোডের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বহুমুখী প্রতিভাবান এই ভারতীয় ৷ বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রেই নয়, বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে পরিচালক হিসাবে সত্যজিৎ রায় আজও এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
শুধু চিত্র পরিচালকই নন, তিনি ছিলেন চিত্রশিল্পী থেকে চিত্রনাট্য নির্মান, সংলাপ, রুপসজ্জা, সঙ্গীত থেকে শুরু করে সম্পাদনা সব কিছুতেই মাষ্টার অফ মাষ্টার। ১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে কলাভবনে ভর্তি হন তিনি৷ এখানেই প্রখ্যাত চিত্রকর নন্দলাল বসুর হাতে শিল্পী সত্যজিৎ এর রূপ প্রকাশ পায়। কলকাতায় ফরাসী চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রেনোয়ারের সাথে সাক্ষাতের পর চলচ্চিত্র নির্মানে আগ্রহী হন তিনি৷ ১৯৫৫ সালে বিভূতিভূষনের পথের পাঁচালী দিয়েই জয় যাত্রা শুরু করেন সত্যজিৎ রায়।
দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ১৩ টি আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সন্মানিত হয় 'পথের পাঁচালী'। এরপর অপরাজিত, পরশপাথর, জলসাঘর, অপুর সংসার, দেবী, তিন কন্যা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, চারুলতা, নায়ক সহ একাধিক কালজয়ী ছবি সৃষ্টি করেছেন সত্যজিৎ রায়। ছোট থেকে বড়ো সকলের প্রিয় 'গুপি গায়েন বাঘা বাইন' তো সত্যজিতের অনন্য সৃষ্টি। সোনার কেল্লা, জয়বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে আজও শিশু চলচ্চিত্র ইতিহাসের অসাধারন সৃষ্টি। অশনি সংকেত, চিড়িয়াখানা, গণশত্রু আজও বাংলা চলচ্চিত্র ইতিহাসের সম্পদ।
১৯৭৭ সালে হিন্দিতে করেছিলেন শতরঞ্জ কি খিলাড়ী। নেপথ্যে কন্ঠ দিয়েছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। সত্যজিৎ রায়ের ১৪টি কাহিনী চিত্রে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এতগুলো ছবিতে অভিনয় করতে পারার জন্য নিজেকে ভাগ্যবান বলেও উল্লেখ করেছেন এই অভিনেতা। সত্যজিৎ রায় নিজের ছবির বাইরে চিত্রনাট্য উপদেষ্টা, সঙ্গীত পরিচালক হিসাবেও কাজ করেছিলেন ১৯৬৫ সালে নিত্যানন্দ দত্ত পরিচালিত 'বাক্স বদল' ছবিতে।
পুত্র সন্দীপ রায়ের ফটিকচাঁদ, গুপীবাঘা ফিরে এলো ছবি দুটিতে কাহিনীকার ও সুরকারের ভূমিকাতেও ছিলেন সত্যজিৎ ৷ সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ১৯৯২ সালে সর্বশেষ ছবি ছিলো 'আগন্তুক'৷ মৃত্যুর কিছুদিন আগে সম্মানিত হয়েছিলেন অস্কার পুরস্কারে। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল তিনি প্রয়াত হন ৷ ভারতবর্ষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পর সত্যজিৎ রায়ই এমন একজন বহুমুখী আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ত্ব যিনি আজও বিশ্ববন্দিত।
মহারাজা তোমারে সেলাম ...... সেলাম।