Headlines
Loading...
রাজ্যে প্রথম রক্তের চাহিদা পূরণে বিশেষ উদ্যোগ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের

রাজ্যে প্রথম রক্তের চাহিদা পূরণে বিশেষ উদ্যোগ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান: সারা বছর ধরে রক্তের চাহিদা এবং সরবরাহ সচল ও স্বাভাবিক রাখতে এবার রাজ্যের মধ্যে প্রথম এক অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করতে চলেছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কতৃপক্ষ। হাসপাতালেরই সমস্ত ডাক্তার, নার্স, জুনিয়র ডাক্তার, মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রী এমনকি স্ক্যাভেঞ্জিং কর্মীদের নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে রক্ত সংগ্রহের একটি গ্রুপ। আর এই গ্রুপের সদস্যরাই সারা বছর বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালেই রক্ত দান শিবিরে রক্ত দিয়ে রক্তের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবেন। 

বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি সময়ে বর্ধমান হাসপাতালে রয়েছেন প্রায় ৪০০ জন চিকিৎসক। রয়েছেন প্রায় ৬০০ জন নার্সিং স্টাফ। প্রতিবছর ১৫০ জন করে এক একটি বর্ষে ছাত্র রয়েছে। ৪টি বর্ষে মোট ছাত্র সংখ্যা ৬০০। পাস আউট ছাত্রের সংখ্যাও রয়েছে ৬০০। রয়েছেন ৬০০ জন স্ক্যাভেঞ্জিং কর্মী। ফলে প্রায় ২৮০০ হাসপাতালের কর্মী, চিকিৎসক, নার্স, ছাত্রছাত্রী রয়েছেন। আর এবার তাঁদের রক্তের গ্রুপ নিয়ে তৈরী হতে চলেছে নতুন একটি গ্রুপ। যে গ্রুপ আপদে বিপদের পাশাপাশি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংককে সচল রাখতে সাহায্য করবেন। 

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে O+ রক্ত না থাকায় এক রোগীকে চিকিৎসক নিজে রক্ত দিয়েছেন। চিকিৎসকের এই মানবিক মুখকে অভিনন্দিত করেছেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। প্রশংসা জানিয়েছেন খোদ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডাঃ অমিতাভ সাহা।  কিন্তু এরপরেই প্রশ্ন উঠেছে হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের এই অবস্থা কেন? 

বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. অমিতাভ সাহা জানিয়েছেন, রক্তদান উৎসব নয়। নয় ভ্রাম্যমাণ রক্তদান শিবির কিংবা ১০০-২০০ বোতল রক্ত সংগ্রহের কোনো শিবির। কার্যত ১ বোতল রক্ত দিলে যেমন ক্ষতি হয় না, তেমনি লাভও হয় না। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যাটি বোঝানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু তেমনভাবে সফল হতে পারছেন না। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ২৫০০ বোতল রক্ত লাগে। ফলে দেখা গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের ৫০০ থেকে ১৫০০ বোতল রক্তের চাহিদা থাকছে। বিভিন্ন ক্যাম্পের ওপর এই রক্ত পাওয়া নির্ভর করছে। 

তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের এই রক্ত দেবার ক্ষেত্রে তাঁরা কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখেন। প্রথমত থ্যালাসেমিয়া রোগী, শিশু এবং প্রসূতিদের চাহিদাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়। এর সঙ্গে রয়েছে দুর্ঘটনাজনিত কারণে রক্তের চাহিদা ও জোগানের বিষয়টি। ফলে রক্তের এই চাপ মেটাতে তাঁরা প্রতিনিয়তই হিমসিম খাচ্ছেন। এজন্য তাঁরা সমস্ত রক্তদান শিবিরের উদ্যোক্তাদের কাছে আবেদন জানিয়েছেন এবং জানাচ্ছেনও। 

ডা. সাহা জানিয়েছেন, এক বোতল রক্তকে তিনটি ভাগে ভাগ করে রাখা হয়। রক্তের শ্বেত কণিকা, লোহিত কণিকা এবং প্লেট লেট। এর মধ্যে লাল রক্তের মেয়াদ মাত্র ৩৫ দিন, প্লেট লেটের মেয়াদ ৫দিন আর সাদা রক্তের মেয়াদ ১ বছর। তাই একসঙ্গে শয়ে শয়ে রক্ত দিলেও তার অধিকাংশই নষ্ট হবার সম্ভাবনা থেকে যায়। সেজন্য তাঁরা উদ্যোক্তাদের কাছে আবেদন করেছেন, যাঁরা রক্তদান শিবির করতে চাইছেন তাঁরা ছোট ছোট ক্যাম্প করুন। তাতে সকলের লাভ। 

এরই পাশাপাশি বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সবসময়ের জন্য তৈরী রয়েছেন এই ২০-২২ জনের ক্যাম্প করতে। এজন্য আলাদা করে কোনো মঞ্চ বাঁধার দরকার নেই। ব্লাড ব্যাঙ্কেই রয়েছে এই ব্যবস্থা। উদ্যোক্তারা আগাম জানিয়ে চলে আসুন ব্লাড ব্যাঙ্কে। এর ফলে উদ্যোক্তাদের রক্তদান শিবিরের খরচও বাঁচবে, উদ্দেশ্যও সফল হবে। 

প্রসঙ্গত, ডা. সাহা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার যে চিকিৎসক রোগীকে ১ বোতল রক্ত দিয়েছেন, সেই রোগীর আবার রক্তের প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ওই চিকিৎসক আর রক্ত দিতে পারবেন না। তাই এভাবে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্যই তাঁরা চাইছেন একটা সুপরিকল্পনার মাধ্যমে ব্লাড ব্যাঙ্ককে সচল রাখতে। বাইরের ক্যাম্পগুলির ওপর ভরসা ছাড়াও তাঁরা হাসপাতালের কর্মী, চিকিৎসক প্রমুখদের নিয়েই একটি স্কোয়াড তৈরী রাখছেন। প্রয়োজনে যেন তাঁদের কাছ থেকে রক্ত পাওয়া যায়। যেন কোনোভাবেই ব্লাড ব্যাঙ্কে কোনো গ্রুপের রক্তই শূন্য জায়গায় না পৌঁছায়। এজন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আর তাহলেই একজন মানুষের দেওয়া এক বোতল রক্তই অনেক উপকারে লাগবে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});