Headlines
Loading...
বর্ধমানে কাটমানি কাণ্ডে তৃণমূল নেতাকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ,অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে

বর্ধমানে কাটমানি কাণ্ডে তৃণমূল নেতাকে খুন করে ঝুলিয়ে দেওয়ার অভিযোগ,অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ বর্ধমান শহরের ১৩নং ওয়ার্ডের বড়নীলপুর বটতলা এলাকায় এক তৃণমূলের বুথ এজেণ্টের রহস্যমৃত্যু বুধবার নিয়ে চাঞ্চল্য দেখা দিল। মৃত তৃণমূল নেতার নাম পূর্ণেন্দু চ‌্যাটার্জী (৫২)। বুধবার সকালে বর্ধমান শহর লাগায়ো চৈত্রপুর গ্রামের একটি আমগাছ থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই ঘটনার পরই তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে পুর্ণেন্দুবাবুকে খুন করে ঝুলিয়ে দেবার অভিযোগ করে শহর জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। তৃণমূল কংগ্রেসের শহর সভাপতি খোকন দাসের নেতৃত্বে বর্ধমান থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে মৃতদেহ ময়নাতদন্তের পর কার্জন গেটের সামনে জিটিরোডে মৃতদেহ নামিয়ে রেখে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবীতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরে মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান তৃণমূল নেতারা।

এদিকে, তৃণমূল নেতৃত্ব বিজেপির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেও বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে বিজেপি মোটেও জড়িত নয়। গোটা ঘটনাই তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফল। তিনি জানিয়েছেন, যে এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে সেই এলাকায় বিজেপি এখনও শক্তিশালী হতে পারেনি। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ গোটা ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত সত্য সামনে আনুক।

.
অপরদিকে, মৃতের স্ত্রী সন্ধ্যা চ্যাটার্জ্জী জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই স্থানীও বিজেপির কয়েকজন তার স্বামীর কাছে ৩০ হাজার টাকা কাটমানি বাবদ ফেরত দেবার দাবী জানিয়ে তাঁদের বাড়িতে হুজ্জুতি করছিল। তিনি জানিয়েছে্ন, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তুলে এই চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। এর জেরে তিনি কয়েকদিন বাড়িতে ছিলেন না। মঙ্গলবার পুর্ণেন্দুবাবু তাঁর মেয়েকে দেখতে কলকাতার সরশুনায় যান। সেখান থেকে বিকালে ফেরার সময় ফোন করে জানান, তিনি ট্রেনে উঠছেন। এরপর রাত্রি প্রায় ৮টা ২০ নাগাদ তাঁর ফোন বেজে গেলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এরপর বুধবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ৮ কিমি দূরে চৈত্রপুর গ্রামের একটি আমগাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।

সন্ধ্যাদেবীর দাবী, তাঁর স্বামীকে বিজেপি সমর্থকরাই খুন করে টাঙিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার পর জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই পুর্ণেন্দুবাবু বিভিন্ন জনকে বিভিন্ন সরকারী পরিষেবা পাইয়ে দেবার নাম করে টাকা নিয়েছিলেন। কাউকে বাংলা আবাস যোজনায় বাড়ি করে দেবার নাম করে, আবার কাউকে ভোটার কার্ড করে দেবার নাম করে টাকা নিয়েছেন। কিন্তু অনেকেই টাকা দিয়েও কাজ পাননি। তাঁরাই বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর কাছে টাকা ফেরতের দাবী জানাচ্ছিলেন।

উল্লেখ্য, পুর্ণেন্দুবাবুর একসময় বর্ধমান শহরে ঘড়ি মেরামতের দোকান ছিল। বেশ কয়েকবছর তা বন্ধ রয়েছে। এরপর তিনি স্থানীয়ভাবে পুজো পার্বণ করতেন। পাশাপাশি তিনি এলাকার তৃণমূল নেতা হিসাবে কাজ করতেন। তিনি ওই এলাকার ২৯৪নং বুথের তৃণমূলের এজেণ্ট ছিলেন। এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, গত ২০ জুন পুর্ণেন্দুবাবুর ওই টাকা ফেরত দেবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তিনি বাড়ি থেকে বেপাত্তা হয়ে যান। গত কয়েকদিন ধরে তিনি বাড়িই আসেননি। এরপর মঙ্গলবার সকালে পাওনাদাররা তাঁর বাড়িতে আসেন। কিন্তু তিনি বাড়িতে না থাকায় পাওনাদাররাই বাড়িতে তালা ঝুলিয়ে বাড়ির দেওয়ালে 'কাটমানি' লিখে চলে যান।

বাড়িতে তালা বন্ধ করে দেওয়ায় সন্ধ্যা দেবী এবং পূর্ণেন্দুবাবুর ছেলে বর্ধমান পুরসভার অস্থায়ী কর্মী তন্ময় চ্যাটার্জী আত্মীয়বাড়ি চলে যান। এদিকে, বুধবার বিকালে মৃতদেহ নিয়ে তৃণমূল নেতারা বাড়িতে পৌঁছে বাড়ির তালা ভেঙে তাঁদের বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে আসেন। এদিকে, এই ঘটনায় পুলিশ এক দম্পতি সহ আরও দুজন কে আটক করেছে। যদিও প্রতিবেশীদের দাবী,খুন নয়, পাওনাদারদের টাকা মেটাতে না পেরে পুর্ণেন্দুবাবু নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। যদিও সাম্প্রতিক কাটমানি কাণ্ডের জেরে বর্ধমান শহরের ১৩ ও ১৪ নং ওয়ার্ড প্রায় প্রতিদিন খবরের শিরনামে উঠে আসছে। দুদিন আগেই কাউন্সিলারের স্বামীকে মারধোরের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়েছিল এই এলাকা। এবার তৃণমূলের বুথ এজেন্ট কে খুন করে টাঙ্গিয়ে দেওয়ার অভিযোগে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে বড়নীলপুর এলাকায়।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});