Headlines
Loading...
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতির আত্মহত্যার চেষ্টা ! তীব্র আলোড়ন

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতির আত্মহত্যার চেষ্টা ! তীব্র আলোড়ন


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ অতিরিক্ত মাত্রায় ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হলেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা জেলা জুড়েই। ঠিক কি কারণে তিনি এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন তা নিয়ে ক্রমশই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। শম্পা ধাড়ার পরিবারের তরফ থেকে অবশ্য এই বিষয়ে জানানোর কাউকে পাওয়া যায়নি। তাঁর বাড়িতে গেলে বাড়িতে তালা বন্ধ দেখতে পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, ছোটবেলা থেকেই শম্পা ধাড়া তাঁর মাসি মাধবী পাকড়ের কাছে খণ্ডঘোষ থানার শ্যামাডাঙা এলাকাতেই থাকতেন। শম্পা ধাড়ার বাবা মা সহ পরিবারের অন্যান্যরা থাকেন রায়নার শ্যামসুন্দরের শিবরামপুরে। মাধবী পাকড়ে একটি আইসিডিএসের কর্মীও। গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনের মতই শুক্রবার সকালেও মাধবীদেবী তাঁর কাজে বেড়িয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর শম্পা ধাড়ারও জেলা পরিষদে আসার কথা ছিল। যথারীতি তাঁকে আনতে গাড়ি গেলে তাঁর নিরাপত্তারক্ষীই প্রথম দেখতে পান শম্পা ধাড়াকে অচৈতন্য অবস্থায় ঘরে শুয়ে থাকতে। বার বার ডেকেও সাড়া না পাওয়ায় তিনি দ্রুততার সাথে ওই গাড়িতেই সরাসরি অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

এদিকে, খবর পেয়েই অনাময়ে ছুটে যান জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু সহ অন্যান্য কর্মাধ্যক্ষ ও জেলা পরিষদের কর্মীরাও। অনাময়ে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে নিয়ে আসা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর চিকিৎসা শুরু করার পর অবজারভেশন রুমে তাঁকে রাখা হয়। সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন শম্পা ধাড়া। সেজন্য অনাময় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালেই তাঁর চিকিৎসাও চলছে। তিনি নিয়মিত ওষুধও খান। দেবু টুডু জানিয়েছেন, এদিন চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে তিনি যে ওষুধ খান সেই ওষুধই কোনো কারণে বেশি খেয়ে ফেলার জন্য এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে যেহেতু এদিন তিনি কথা বলার মত পরিস্থিতিতে ছিলেন না তাই যতক্ষণ না তিনি সুস্থ হচ্ছেন ততক্ষণ এব্যাপারে কিছু বলা সম্ভব নয়।

হাসপাতাল সুপার ডা. উৎপল দাঁ জানিয়েছেন,সভাধিপতির নিউরোলজিক্যাল সার্টডাউনের জন্যই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তিনি সুস্থ আছেন। আগামীকাল শনিবার তাঁকে ছুটি দেওয়া হতে পারে। যদিও ঘুমের ওধুষ মাত্রাতিরিক্ত খাবার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন হাসপাতাল সুপার। অপরদিকে,গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, শম্পা ধাড়া মাত্রাতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খাওয়ার জন্যই এই ঘটনা ঘটে। সেক্ষেত্রে তিনি কেন এই মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ খেলেন তা নিয়েই শুরু হয়েছে ব্যাপক চাপান উতোর।

শম্পাদেবী ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরেই পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সদস্য থেকে কর্মাধ্যক্ষরা আড়াআড়িভাবে ভাগ হয়ে গেছেন। দুটি শিবিরই একে অপরের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলছে। ফলে জেলা পরিষদের স্বাভাবিক কাজকর্মও ব্যাহত হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন রাস্তার টেণ্ডার নিয়েও জলঘোলা হয়। নিয়ম বর্হিভূতভাবে টেণ্ডার পাশ করা হচ্ছে এই অভিযোগ তুলে একটি শিবির টেণ্ডার পাশ বন্ধ করে দেন। অন্য শিবির পঞ্চায়েত আইন মেনেই টেণ্ডার করা হচ্ছে বলে দাবী তুলে টেণ্ডার পাশ করানোর চেষ্টা করেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে খোদ তৃণমূলের উপরমহলেও দুপক্ষেরই গুচ্ছ গুচ্ছ নালিশ জমা পড়ে। সেই নালিশের মধ্যে খোদ শম্পা ধাড়ার বিরুদ্ধে টেণ্ডার পাশ করানোর জন্য কমিশন নেবারও অভিযোগ জমা পড়ে।

গত বুধবার বর্ধমানে আসেন গ্রিভেন্স সেলের আহ্বায়ক কর্ণেল দীপ্তাংশু চৌধুরী। তিনিও পৃথকভাবে সভাধিপতি এবং সহকারী সভাধিপতিকে নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। খোদ জেলা পরিষদের অন্দরের খবর, বর্তমান সময়কালে যেভাবে জেলা পরিষদের কাজকর্ম পরিচালিত হচ্ছে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। গোটা বিষয়টিকে যে দলের উপরমহলও ভালভাবে নিচ্ছে না তাও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এরই মাঝে শম্পা ধাড়ার এই আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা রীতিমত জেলা পরিষদে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। যদিও এরই মাঝে কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষ এর আচরণ ও কর্মপ্রণালী নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে জেলা পরিষদের অন্দরে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});