আকাশ পাল,কালনাঃ ভবা পাগলা প্রতিষ্ঠিত ভবানী মন্দিরের বাৎসরিক উৎসব দেখতে এখন মানুষের ঢল নেমেছে কালনায়। কালনা শহরের জাপট এলাকায় অবস্থিত এই মন্দিরে উৎসব উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বহু মানুষ প্রতিবছর আসেন। দেখা মিলবে বিদেশিদেরও। মন্দির প্রাঙ্গণে বসে মেলার আসর।
১৯৫১ সালে ভবা পাগলা বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন কালনার জাপটে। তৈরি করেছিলেন ভবা পাগলার মন্দির। এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করার পরেই বৈশাখের শেষ শনিবার বিশেষ উৎসব শুরু করেছিলেন ভবা পাগলা। তারপর থেকে প্রতি বছরই বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয় তার মন্দিরে। শুধু সাধন-ভজনই নয়, এই মন্দির ছিল তাঁর সাহিত্য চর্চার জায়গাও। এই মন্দিরে বসেই তিনি অনেকগুলি গান ও কবিতা লেখেন। তাঁর ভক্তদের মুখ থেকে শোনা যায় যে, এখনও পর্যন্ত ভবা পাগলার ২৫ হাজার গানের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, উৎসবের আগের দিন ভক্তেরা উপোষ করে থাকেন। তার পর উৎসবের দুপুরে কয়েক হাজার ভক্ত ভোগ খান। মেনুতে থাকে ভাত ও পাঁচ রকম সব্জি। বিকেলে মন্দির প্রাঙ্গন থেকে ভক্তদের নিয়ে বের হওয়া শোভাযাত্রা হয় শেষ হয় ভাগীরথীর ঘাটে। সেখানে নিয়ম মেনে একটি সোনার লাঠিকে স্নান করানো হয়। সঙ্গে নিয়ে যাওয়া মঙ্গল ঘটের মধ্যে নদী থেকে জল ভরা হয়। সন্ধ্যায় শুরু হয় ভবানীর পুজো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছরই উৎসবের আগেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে সাধু-সন্ন্যাসীরা আসতে শুরু করেন। এ বারও তার ব্যতিক্রম হবেনা। মন্দির প্রাঙ্গনেই তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। আসবে বাউল, কবিয়াল ও কীর্তনের দল। মন্দির সংলগ্ন মঞ্চে বসে শিল্পীরা ভবা পাগলার গান শোনান। হয় ধর্মসভা। ভক্তদের হাতে তুলে দেওয়া হয় প্রসাদ। রবিবার, উৎসবের শেষ দিনে হয় কবিগান। তাই অনেক শিল্পীই এখানে প্রাণের টানে ছুটে আসেন।
এই পুজো উপলক্ষে হাজার হাজার দর্শনার্থীর ঢল নামবে। তাই প্রশাসন থেকে সমস্ত রকম ব্যবস্থা থাকবে। ২০১৬ সালে এই বাৎসরিক উৎসবে পুজো দিয়ে ফেরার পথে কালনা ফেরিঘাটে নৌকাডুবির ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল প্রায় ২০ জনের। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তাই এবার আগে থেকেই কালনা-শান্তিপুর ফেরিঘাটে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসনের তরফ থেকে। পুজোর একদিন আগে ও পরে ফেরিঘাটে থাকবে পুলিসি নিরাপত্তা ও নৌকার পরিবর্তে লোহার ভেসেলে যাত্রী পারাপারের ব্যাবস্থা। সিসি ক্যামেরার পাশাপাশি ড্রোনের সাহায্যেও নজরদারি চালানো হবে। মেলা চত্বরে থাকবে ওয়াচ টাওয়ার, নদীঘাটে থাকবে স্পিড বোট ও বিপর্যয় মোকাবিলা টিম। মেলা চত্বরেও থাকবে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যাবস্থা।
কালনার মহকুমা শাসক নীতেশ ঢালি জানান , নদী পারাপারের জন্য সমস্তরকম নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা টিম, ও স্পিড বোট থাকবে। ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চালানো হবে। নৌকার পরিবর্তে লোহার ভেসেলে করে যাত্রীদের নদী পারাপার করা হবে। কোন রকম যাত্রীদের যাতে সমস্যা না হয়, সেদিকে নজর থাকবে।