Headlines
Loading...
স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদ, নিজের দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতি বাবা

স্ত্রীর সঙ্গে বিবাদ, নিজের দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতি বাবা



ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ টানা স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির জেরে নিজের দুই নাবালক সন্তানকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে গিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন বাবা। সোমবার রাতে মর্মান্তিক এই ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মশাগ্রাম ষ্টেশন লাগোয়া ভূমিজ পাড়ায়। মৃতদের নাম রাকেশ সিং (২৪) এবং তাঁর দুই ছেলে অজয় সিং (৫) এবং বিজয় সিং (৩)।

মৃত রাকেশ সিং-এর বাবা দিলীপ সিং জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো সোমবার রাতেও দুই নাতিকে তাঁর ঘরেই ঘুম পারিয়ে দিয়ে তারাও শুয়ে পড়েছিলেন। রাত সারে ৯ টা নাগাদ রাকেশ বাড়ি ফিরে ছেলে দুটোকে ঘুম থেকে তুলে পাশে নিজের ঘরে শোয়াবে বলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর রাকেশ কে খেতে ডাকতে গিয়ে ঘরে কাউকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করে বাড়ির লোকেরা। এরপর খুঁজে না পেয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়া রেল লাইন ধরে খোঁজ করতে শুরু করেন দিলীপ সিং। সেই সময় মশাগ্রাম ষ্টেশনের দিক থেকে লাইন ধরে আসা এক জিআরপি কর্মীর কাছ থেকে জানতে পারেন, সামনে এক ব্যাক্তির দেহ পড়ে রয়েছে। কাছে গিয়ে দেখতেই বুঝতে পারেন সেটি রাকেশের মৃতদেহ। এরপর কিছুটা দূরেই দুই নাতির মৃতদেহও উদ্ধার হয়। এই ঘটনায় গোটা এলাকায় তীব্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দিলীপ সিং জানিয়েছে্ন, স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি জেরে নিজে আত্মঘাতি হলেও তাঁর দুই নাবালক শিশু সন্তানকে কে দেখবে এই চিন্তা থেকেই সম্ভবত দুই সন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতি হয় রাকেশ।

এদিকে মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই রাকেশ সিং-এর স্ত্রী লক্ষ্মী সিং-এর সঙ্গে বিবাদ চলছিল রাকেশের। প্রায়শই সে রাকেশ সিংকে ছেড়ে চলে যাবার কথাও বলছিল। তা নিয়ে দুটি পরিবারের মধ্যে দফায় দফায় বসে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করা হয়। গত নভেম্বর মাসে কালীপূজো দেখতে যাবার নাম করে লক্ষ্মী সিং বাড়ি ছেড়ে চলে যান।

তারপর আর শ্বশুরবাড়ি ভূমিজ পাড়ায় ফিরে আসেননি। তাঁকে ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার চেষ্টাও চালান রাকেশ। সোমবার রাকেশ শ্বশুরবাড়িতে যান। দিলীপবাবুর অভিযোগ, সেই সময় তাকে মারধোর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এরপরই বর্ধমান হাওড়াগামী ৯ টা বেজে ১৫ মিনিটের লোকালে আত্মঘাতি হন সন্তান সহ রাকেশ।

মৃতের আত্মীয় সুভাষ দলুই জানিয়েছেন, অন্য দুই পুরষের সঙ্গে সমান্তরালভাবে সম্পর্কে রেখে চলছিল লক্ষ্মী। তা নিয়ে প্রতিবাদ করছিলেন রাকেশ। আর তাই তাকে ছেড়ে অন্যজনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরী করার চেষ্টা করছিলেন লক্ষ্মী। সুভাষবাবু জানিয়েছেন, এব্যাপারে লক্ষ্মী সিং-এর মাকে জানানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। তাঁরা মেয়েকে সাবধান করতে পারলে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটত না। এদিকে, এই ঘটনার পর ছোট পুত্রবধূ এবং তার বাবা-মার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু।


মঙ্গলবার সকালে খবর পাওয়ার পর মশাগ্রাম জিআরপি মৃতদেহ উদ্ধার করে কামারকুণ্ডু নিয়ে চলে যায়। যদিও রাকেশের পরিবারের দাবী,এতবড় দুর্ঘটনার খবর পেয়েও লক্ষ্মীদেবী শ্বশুরবাড়িতে আসেননি, এমনকি খোঁজও নেননি।

শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রায় ২ কিমি দূরে ভীমগেট এলাকায় লক্ষ্মীদেবীর বাপের বাড়ি। এই ঘটনা সম্পর্কে লক্ষ্মীদেবী জানিয়েছেন, মদ খেয়ে তাঁকে মারধর করা হত। এমনকি সন্তান হবার পর এই অত্যাচার আরও বাড়ে। তাই তিনি রাকেশের সঙ্গে ঘর করতে চাননি। সন্তান সহ স্বামীর এই আত্মঘাতি হবার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্যই করতে চাননি। এমনকি অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টিও তিনি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});