ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বড়শুলঃ বৃদ্ধ অবস্থায় মায়েদের প্রতি ছেলেদের বঞ্চনা আর তার পরিণতিতে মায়েদের করুণ অবস্থার কথা ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের বড়শুল ইয়ং ম্যানস এ্যাসোসিয়েশনের এবছর পুজোয়। স্বাভাবিকভাবেই জেলার অন্যান্য পুজো গুলোর সঙ্গে বড়শুল বাইমা এর পুজোর ভাবনা এবার দর্শকদের কাছে হয়ে উঠতে চলেছে অন্যতম আকর্ষণ। এবছরের থিম 'ভাল থাকিস খোকা - ইতি তোমার মা।'
পুজোর থিম মেকার বিশ্বভারতীর অংকন শিক্ষক অতনু চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আধুনিক দ্রুত গতির এই সমাজের আজ সবচেয়ে বড় যে সমস্যা তা হল, বৃদ্ধ মা বাবা দের প্রতি সন্তানদের অবহেলা।আর তাই সমাজের এই অবক্ষয়কেই এবারে বাইমার ২০তম বর্ষে তিনি থিম হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তিনি এই ভাবনার বাস্তব রুপ দিতে মণ্ডপ সজ্জায় ব্যাবহার করেছেন একটি বিশাল আয়না। যেখানে প্রত্যেক দর্শনার্থী প্রতিমা দর্শনের সময় নিজেকে একবার দেখতে পাবেন। অতনু বাবু এই আয়নার নাম দিয়েছেন 'বিবেক'। অর্থাৎ নিজের বিবেককে সবাই এই ভাবানর সঙ্গে একটিবার পরিলক্ষিত করতে পারবেন।
অসাধারণ শিল্পকলায় আলো এবং শব্দের মেলবন্ধনে এই ভাবনাকে এখন ফুটিয়ে তোলার কাজ চলছে জোরকদমে। বাইমার গোটা মণ্ডপকে গড়ে তোলা হয়েছে ৩টি পর্যায়ে। মণ্ডপের সামনেই থাকছে তালপাতা দিয়ে আদিবাসী মায়ের মূখমণ্ডল। রয়েছে বিভিন্ন মডেলও। ভেতরে প্রবেশ করার পর প্রথম অংশে রয়েছে মাতৃ জঠরে শিশুর থাকা এবং প্রসব যন্ত্রণাকে কিভাবে মাতৃত্বের সোহাগে গর্ভবতী মা উপলব্ধি করছেন তার দৃশ্য। দ্বিতীয় অংশে রয়েছে বৃদ্ধ মায়েদের করুণ অবস্থার বর্ণনা। যেখানে রয়েছে জেলখানার গরাদের মধ্যে থেকে বৃদ্ধা মা বেরিয়ে আসতে চাইছেন, তার দৃশ্য। সেখানে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে গরাদের মধ্যে থেকেও মা তার সন্তানের জন্য দুহাত মেলে ধরে সুখ চাইছেন। তাঁদের সমৃদ্ধি চাইছেন। মণ্ডপের গোটা আকাশ বাতাস জুড়ে মায়ের এই চাওয়াকেই তুলে ধরা হয়েছে দ্বিতীয় অংশে। মণ্ডপের তৃতীয় অংশে রয়েছে সন্তান কোলে বাংলার মায়েদের দৃশ্য।
অতনুবাবু জানিয়েছেন, তাঁর এই থিমের মধ্যে দিয়ে আজকের সমাজের এই মারাত্মক অবক্ষয়কে তুলে ধরে তিনি সেই সমস্ত সন্তান-সন্ততিদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিতে চেয়েছেন। যেন কোনো সন্তান তাঁর মাকে তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে এমন কষ্ট না দেন। তিনি জানিয়েছেন, যতদিন না সন্তান বড় হচ্ছে - ততদিন মা-ই তার কাছে সব। মা-ই তার কাছে পৃথিবী, আকাশ। একটা সময় নিজের সমস্তটুকু দিয়ে নিঃস্ব মা তার সন্তানকে বড় করে তোলেন, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সেই সন্তানই মাকে ফের নিঃস্ব করে দেয়।
ক্লাবের সম্পাদক বিপুল মণ্ডল জানিয়েছেন, এবারে তাঁদের পুজো ২০তম বর্ষে পদার্পণ করল। বাজেট প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। তিনি জানিয়েছেন, বিগত কয়েকবছর ধরেই বাইমা থিমের অভিনবত্বে জেলাবাসির মন জয় করে নিয়েছে। এমনকি এবারও রাজ্য সরকারের যে পুজো গাইড ম্যাপ প্রকাশিত করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বাইমার পুজোও।