সান্তানু দাস, পুরুলিয়াঃ পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর পঞ্চকোট রাজ পরিবারে আজ দেবীর বোধন হয়ে গেল। রাজ পরিবারের পরম্পরা আর ঐতিহ্য মেনেই শুরু হলো এই পুজো। হাতে গোনা আর মাত্র এগারো দিন বাকি থাকলেও আক্ষরিক অর্থে,আজ থেকেই পুজো শুরু হয়ে গেল রাজ পরিবারে। ঢাকের বোলে আর শাস্ত্রীয় মন্ত্রচ্চারণের মাধ্যমে রাজবংশের কুলদেবী রাজরাজেশ্বরী মাতার ঠাকুর দালানে সূচনা হল প্রায় দুই হাজার বছরের প্রাচীন পুজোর। আজ ছিল আদ্রা নক্ষত্রযুক্ত কৃষ্ণা নবমীর বোধন। কাশীপুর রাজবাড়িতে আজ থেকেই অষ্টধাতুর চতুর্ভূজা দেবীর আরাধনা শুরু হয়ে যায়।
হাজার বছরের পুরোনো নিয়ম মেনেই বিগ্রহের বিশেষ স্নান পর্বের পর শুরু হয় পূজার্চনা। এদিনকার মতো দেবীর আরাধনা শেষ হয় পুজো-পাঠের পর ছাগবলি দিয়ে। সন্ধ্যের সময় আরতি পর্ব চলে নিত্যদিনের মতো।
হাজার বছরের পুরোনো নিয়ম মেনেই বিগ্রহের বিশেষ স্নান পর্বের পর শুরু হয় পূজার্চনা। এদিনকার মতো দেবীর আরাধনা শেষ হয় পুজো-পাঠের পর ছাগবলি দিয়ে। সন্ধ্যের সময় আরতি পর্ব চলে নিত্যদিনের মতো।
কাশীপুর রাজ বংশের অন্যতম উত্তর পুরুষ সোমেশ্বর লাল সিং দেও ঠাকুর জানান,প্রায় দুই হাজার বছর আগে তত্কালীন জঙ্গলমহলের রাজা গুলেল সিংহকে পরাজিত করে চাকলা পঞ্চকোট নামে রাজত্ব স্থাপন করেছিলেন দামোদর শেখর সিং দেও। তাঁর রাজত্ব কালে অষ্টধাতু দিয়ে নির্মিত চতুর্ভূজা দেবী রাজরাজেশ্বরী দেবী শিখরবাসিনীর আরাধনা শুরু করেন।
রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন,মহারাজা বিক্রমাদিত্যের বংশধর দামোদর শেখরও ধারনগরের ক্ষত্রকূলজাত রঘু বংশে সেই প্রথা মেনেই পুজোর সূচনা করেছিলেন। এই এলাকার অন্যতম প্রাচীন পুজোর সঙ্গে কালে কালে ইতিহাসের নানা উপাদান যুক্ত হয়েছে। পরবর্তীকালে রাজা জ্যোতিপ্রসাদ সিং দেও এক ফলক নামায় দেব-দেবীর জন্য পৃথক পৃথক সম্পত্তির ব্যবস্থার করেন। দেব-দেবীর পক্ষে সেই সম্পত্তির দেখভালের জন্য একজন সেবায়ত হলেন জগদানন্দ প্রসাদ সিং দেও।
কূল পুরোহিত গৌতম চক্রবর্তী জানালেন, কৃষ্ণা নবমী থেকে ষোল দিন বিশেষ পুজো চলবে। বিশেষ স্নান পর্ব চলে মহাসপ্তমী ও মহাষ্টমিতে। এখানে একটি পাত্রে জল রাখা থাকে, তার ভিতরে একটি ছোট্ট ছিদ্র যুক্ত পাত্র থাকে। ওই ফুটো দিয়ে একবার জল ভর্তি হয়ে গেলে ওটাকে একপাট বলে। প্রাচীন রীতি মেনে অষ্টমীর সন্ধিক্ষণের নির্ঘণ্ট এইভাবে ঠিক হয়। এই সময় নির্ঘণ্ট নির্ধারিত হয়। পুজোর কিছু গুপ্ত নিয়ম রয়েছে- যা সারা ভারতে আর কোথাও পাওয়া যাবে না। সন্ধিক্ষনের বিশেষত্ব হিসেবে সোমেশ্বরলাল বলেন,“ওই সময় সোনার থালাতে রাখা সিঁদুরের উপর মা অধিষ্ঠান হয়ে পায়ের ছাপ দিয়ে যান। অবিশ্বাস্য হলেও এটা ঘটনা এবং চির সত্য।পূর্ব পুরুষদের দেওয়া মায়ের স্বপ্নাদেশে এই ঘটনা ঘটে চলেছে। এটাই এই বংশের পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য।”