পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ নাক শুঁরশুঁর করছিল। হাতের কাছে ছিল সেপটি পিন। সেই সেফটি পিন দিয়ে নাক খোঁচাতে গিয়েই ঘটে বিপত্তি। সেফটি পিন নাকের ভিতরে ঢুকে চলে যায় একদম গলার সংযোগস্থলে (ন্যাসো ফ্যারিংস)। শুধু চলে যাওয়াই নয় , ভেতরে গিয়ে খুলেও যায় সেপটি পিনটি। রীতিমত প্রান সংশয় হয়ে ওঠে বছর দশেকের মৌমিতা লেটের। ভর্তি করা হয় সিউড়ি সদর হাসপাতালে।
সাধারনত এই ধরনের জটিল অবস্থায় রোগীকে রেফার করে দেওয়া হয় তুলনামুলক বড় হাসপাতালে। কিন্তু এক্ষেত্রে হাল ছাড়েননি কর্তব্যরত নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ শুভেন্দু ভট্টাচার্য। নেন চরম ঝুঁকি। আর সেই ঝুঁকি নেওয়ার ফলে সিউড়ি সদর হাসপাতালেই জটিল অস্ত্রোপ্রচারের মধ্যে দিয়ে বিপদ মুক্ত হয়েছে বীরভূমের ময়ূরেশ্বরেরে গুমতা গ্রামের গরীব দিনমজুর পরিবারের ছোট্ট মৌমিতা লেটের জীবন।
বিপদ ঠিক কতটা ছিল? চিকিৎসক শুভেন্দু ভট্টাচার্যের কথায়, সেফটি পিন গলার কাছকাছি চলে গেলে তা বের করাই যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যাটা হয়েছিল সেটি খুলে যাওয়ায়। টেনে বের করতে গেলেই গেঁথে গিয়ে ব্রেনকে ক্ষতিগ্রস্থ করার আশঙ্কা থেকে যায়। আবার সেফটি পিনটি যদি কোনো কারনে নীচির দিকে নেমে শ্বাসনালী বা খাদ্যনালীতে আঘাত করে, তাহলে রোগীর প্রানসংশয় হয়ে যায়। সমস্যা আরও বেড়েছিল অনবরত রক্তক্ষরন হওয়ায়। তার উপর অজ্ঞান করার জন্য নল ভরার সময় রক্ত শ্বাসনালীতে প্রবেশের ভয় ছিল। এককথায় খুবই জটিল হয়ে ওঠে রোগীর পরিস্থিতি। ভাবনা চিন্তা করে বের করা হয় পথ। প্রথমে মুখ দিয়ে গজ ঢুকিয়ে শ্বাসনালী ও খাদ্যনালীর পথ অবরুদ্ধ করা হয়। যাতে কোনো কারনে সেফটি পিনের মুখ বা নির্গত রক্ত দুই নালীকে স্পর্শ করতে না পারে। এরপর এন্ডোস্কোপ যন্ত্র নাক দিয়ে প্রবেশ করিয়ে তাতে থাকা লেন্সের মাধ্যমে সেফটি পিনটির অবস্থান চিহ্নিত করে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে বের করে নিয়ে আসা হয় পিনটি। এক্ষেত্রে রোগীকে অজ্ঞান করতে সাহায্য করেছেন অ্যানাস্থেটিস্ট দেবজ্যোতি চক্রবর্তী। রোগী এখন সম্পূর্ন সুস্থ।
মৌমিতার মা দিনমজুর সীমা লেট জানিয়েছেন, শনিবার মাঠে কাজ করে ফিরে দেখি মেয়ে এই কান্ড করে বসে আছে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রথমে হাসপাতালে বলা হয় এখানে কিছু আর করা যাবে না। কিন্তু শেষমেশ ডাক্তারবাবুদের সাহায্যে তাঁর মেয়ে বেঁচে গেছে। ওনারা ভগবান।