পিয়ালী দাস, বীরভূমঃ বোরখা পড়ে বোবা মেয়ে সেজে নিজের প্রাপ্তন স্ত্রীকে অপহরণ করে বিক্রি করার দেবার এক লোমহর্ষক ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল সিউরিতে। শেষমেশ স্ত্রীর চিৎকারে হাতেনাতে ধরা পরে গণধোলাইয়ের পর অভিযুক্ত স্বামীকে তুলে দেওয়া হল পুলিশের হাতে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকবছর আগে সিউড়ি থানার অন্তর্গত মাটপলসা গ্রামের রাজিয়া বিবির সাথে বিয়ে হয় সিউড়ি থানার অন্তর্গত ছোট আলুন্দা গ্রামের শেখ আব্দুল্লাহর । শেখ আব্দুল্লাহকে এলাকার মানুষ মেয়ে ও মাদক পাচারকারী বলেই চিনত। বছর দুয়েক আগে বাড়ির সম্মতিতেই তাদের দু'জনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রেজিয়া জানতে পারে স্বামী বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মের সাথে যুক্ত। কখনো মাদ্রাসা স্কুল খুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে মেয়ে পাচার, কখনো আবার মাদক পাচার - এইসব মানতে চায়নি রেজিয়া । আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্বামী। নিজেদের ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তুলে সোশ্যাল সাইটে ছেড়ে দেবার ভয় দেখায় রেজিয়াকে। এমনকি মারধর করতেও শুরু করে। এরপর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের দুজনের ।
আর তারপর থেকেই স্বামী আব্দুল্লাহ তার প্রাক্তন স্ত্রীকে বিক্রি করে দেওয়ার বিভিন্ন সময়ে ফন্দি আটে। বিভিন্ন সময় নানাভাবে চেষ্টা করলেও সফল হয়নি সে। এদিকে রেজিয়া নিজে স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে আবার পড়াশোনায় মন দেয়। সে রোজ বাড়ি থেকে সিউড়ি আসে পড়াশোনা করতে। আর এটাই সঠিক সময় বলে মনে করে তার প্রাক্তন স্বামী। এই সুযোগ কাজে লাগাতে একটি মারুতি ভ্যান নিয়ে বোরখা পড়ে বোবা মেয়ে সেজে বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ায় স্বামী আব্দুল্লাহ। রেজিয়াকে ড্রাইভার মারফত বলা করায় বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত না গিয়ে গাড়িতে উঠে বসতে, তারা রেজিয়ার বাড়ির দিকেই যাচ্ছে । রেজিয়া গাড়ির ভেতর একজন বোবা মেয়েকে দেখে সে তখন নিজেকে সুরক্ষিত মনে করে গাড়িতে চাপে। কিন্তু ভেতরে উঠে বসতেই শুরু হয় নারকীয় অত্যাচার।
গলা টিপে ধরে রাখা হয় তার যাতে চিৎকার না করতে পারে। এরপর বেধড়ক মারধর করা হয় গাড়ির ভেতরেই । এইভাবে বেশ কিছুটা রাস্তা আসার পর ছোট আলুন্দা গ্রামের কাছে রেজিয়া আরো জোরে চিৎকার করতে থাকে। জানলার কাঁচে ধাক্কা দিতে থাকে। আর এই ঘটনা দেখে ফেলে গ্রামের কয়েকজন। তারাই তারপর পিছন ধাওয়া করে ধরে ফেলে গাড়িটিকে। রেজিয়ার কাছ থেকে সব ঘটনা জানার পর গণধোলাই দেওয়া হয় আব্দুল্লাহকে। ভাঙচুর চালানো হয় গারিতিতেও। পরে খবর দেওয়া হয় সিউড়ি থানায়।পুলিশ এসে আব্দুল্লাহকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। রেজিয়াকে নিয়ে যাওয়া হয় মহিলা থানায়। সিউড়ি থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটির তদন্ত শুরু করা হয়েছে।