ভারতের উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা শ্রীরাধা আর গোপিনীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের হোলি খেলার পৌরাণিক কাহিনীকে সামনে রেখেই রঙের এই উৎসবে মাতেন। কথিত আছে শ্রীকৃষ্ণ তার কালো রূপ শ্রীরাধার সামনে ঢাকতে নিজের গায়ে রঙের প্রলেপ দিয়েছিলেন। বর্তমানে সারা দেশে অবশ্য পরস্পরকে রঙে আর আবিরে রাঙিয়ে দেওয়ার রীতিই প্রচলিত,কারণ হোলি যে রঙেরই খেলা।
এই উৎসবের আবহে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনী এযুগের নর-নারীর আত্মাকেও নাড়া দেয়। তাই হোলি এখন আধ্যাত্মিকতাকে ছাড়িয়ে সামাজিক উৎসবের আকার নিয়েছে। তাছাড়া বসন্তের শুরুতে প্রকৃতির নতুন রূপে সেজে ওঠার আগে রঙের উৎসবের তাৎপর্যকেও অবহেলা করা যায়না। এই তাৎপর্যের কারণেই আগে রং তৈরী করা হত প্রাকৃতিকভাবে হলুদ আর ফুলের নির্যাস থেকে। তবে এখন তার জায়গা নিয়েছে কিছু কেমিক্যাল। বদল ঘটেছে এখানেই। প্রধান যে রং হোলিতে ব্যবহার করা হত,তা হল লাল - যা কিনা প্রেম আর উর্বরতার প্রতীক ,নীল -কৃষ্ণের গায়ের রঙের প্রতীক ,হলুদ ও সবুজ-প্রকৃতির নতুন রূপের প্রতীক।
সারা দেশের এই রঙের উৎসবে সামিল বাংলাও। এরাজ্যের নানা জেলায় নিজেদের মত করে মানুষ মেতে ওঠেন এই বসন্তোৎসবে। তবে শহর বর্ধমানের মানুষ আজও রাজ পরিবারের তৈরী করা প্রথা মেনে দোল পূর্ণিমার পরের দিন আবির আর রঙের খেলায় পালন করে দোল-উৎসব। কচি-কাঁচারা রাস্তায় নেমে পরস্পরকে রং মাখালেও বড়দের কাছে রঙের এই উৎসবের ধরণ আজকাল কিছুটা বদলেছে। রং মাখামাখির বসন্তোৎসবের সঙ্গে জড়িয়েছে সাংস্কৃতিক উৎসবও। নাচে-গানে নব বসন্তকে বরণের আয়োজন এখন রেওয়াজ।
এজন্য শহরের একাধিক সংস্থার তরফে নানাবিধ উদ্যোগের তৎপরতা শুরু হয়ে যায় অনেক আগে থেকেই। বিভিন্ন সংগীত ও নৃত্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রভাত ফেরী তো আছেই। তাছাড়া শহরের বেশ কয়েকটি ঘেরা উদ্যানে হোলির দিন নানা সংস্থার পক্ষ থেকে আয়োজিত হয় দোল উৎসব। উৎসবের উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের দেখা যায় পরস্পরকে আবিরে রাঙিয়ে দিতে। পিছিয়ে থাকেনা প্রশাসনও। প্রশাসনের আধিকারিকরা দিনটিতে পদাধিকারীর তকমা খুলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেতে ওঠেন রঙের উৎসবে, চলে খাওয়া দাওয়াও।
প্রকৃতির রূপবদলের মহিমা মানুষের মনে যে প্রভাব ফেলে, তার থেকেই আস্তে আস্তে জন্ম হয়েছে নানা উৎসবের। উৎসবের এক সময়ের সাধারণীকরণ আজ অনেক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ। তবু উৎসব হারায় না তার উদ্দেশ্য ,তার তাৎপর্য। সামাজিক হোলি উৎসব আজ চার দেওয়ালের ঘেরাটোপের মধ্যে সাংস্কৃতিক মঞ্চে পালিত হলেও, তার প্রেমের বার্তাটি রয়েছে অক্ষুণ্ণ।