ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমান:বর্ধমান শহরের রাণীগঞ্জ বাজার এবং তেঁতুলতলার পাইকারী বাজারকে বর্ধমানের কালনা রোডের কিষান মান্ডিতে নিয়ে যাওয়ার প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলো পূর্ব বর্ধমান চেম্বার অফ ট্রেডার্স।রবিবার কার্জন গেট চত্বরে এক বিশাল জমায়েত থেকে সবজি,মাছ,ফল ব্যাবসায়ীরা তথা সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রশাসনকে জানিয়ে দিলো যদি বাজার সরানোর সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করা না হয়,তাহলে আগামী ২ডিসেম্বর থেকে বর্ধমান শহরের শুধু রাণীগঞ্জ বাজার বা তেঁতুলতলা বাজারই নয় কালনা গেট বাজার, ষ্টেশন বাজার, নীলপুর বাজার, শাঁখারীপুকুর বাজার, বড়বাজার সহ সমস্ত বাজারের ব্যবসায়ীরাই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করবেন। আর ব্যাবসায়ীদের এই হুমকির পরই কার্যত শহরজুড়ে আশংকা তৈরী হয়েছে বাজার বন্ধ হলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কি দাঁড়াবে। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়বে। ফলে এক অচলঅবস্থা তৈরী হওয়ার পরিস্থিতি আসতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন শহরবাসীর একাংশ।
উল্লেখ্য,মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বর্ধমান ১নং ব্লকের এই কিষাণ মাণ্ডিকে চালু করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টালবাহানা চলছে। একাধিকবার চেষ্টা চালিয়েও কিষাণ মাণ্ডিকে চালু করতে না পারায় ক্রমশই কোণঠাসা অবস্থায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে বর্ধমান পৌরসভার উদ্যোগে পাইকারি সবজি ও মাছ ব্যাবসায়ীদের এই কিষান মান্ডিতে উঠে যাওয়ার জন্য বলা হয়। কয়েকদফা জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা হয় বাজার সরিয়ে নেওয়া সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। কিন্তু ব্যাবসায়ীরা প্রশাসনকে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিলেও বাজার সরিয়ে শহর থাকে ৭ - ৮ কিলোমিটার দূরে ব্যবসা করার ব্যাপারে ঘোর আপত্তি জানায়। এরপর প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেয় আগামী ৩০নভেম্বরের মধ্যে বাজার সরিয়ে নিতে হবে ব্যাবসায়ীদের। কিন্তু প্রশাসনের এই 'তুঘলকি' সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ব্যাবসায়ীদের নতুন সংগঠন পূর্ব বর্ধমান চেম্বার অফ ট্রেডার্স এর সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রবিজয় যাদব রবিবার ঘোষণা করে দেন বাজার সরানো হবে না। প্রয়োজনে সমস্ত বাজার বন্ধ করে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে ব্যাবসায়ীরা।
তিনি বলেন,প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দুই বাজারের অনুমতি নেই বলে যা প্রচার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কারণ রাণীগঞ্জ বাজার ও তেঁতুলতলার এই দুই বাজার সরকারী অনুমোদন প্রাপ্ত। ব্যবসায়ীরাও লাইসেন্স প্রাপ্ত। তাঁরা নিয়মিত পুরসভাকে ট্যাক্সও দেন। স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসনের এই মিথ্যা ভাষণের বিরুদ্ধেও তাঁদের লড়াই চলবে।
যদিও ইতিমধ্যে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়ে দিয়েছেন, ১ ডিসেম্বর থেকে বর্ধমান শহরে মালবোঝাই কোনো লরীকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
এদিকে, এ ব্যাপারে এদিন চন্দ্র বিজয় যাদব জানান, ইতিমধ্যেই প্রশাসনের এই নির্দেশের প্রতিবাদে তাঁরা কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছেন। আগামী ২৯ নভেম্বর মামলার শুনানি রয়েছে। সেই শুনানিতে জেলাশাসককে স্বয়ং হাজির হতে বলা হয়েছে বলেও এদিন তিনি দাবী করেছেন। এরই পাশাপাশি তিনি জানান, প্রশাসন সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে বিসিরোডের একপাশে মঞ্চ বেঁধে তাঁরা লাগাতার বিক্ষোভ ও অনশনে বসবেন।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশাসন ও ব্যাবসায়ীদের সংঘাতে চরম আশংকায় দিন গুনছেন ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী থেকে বর্ধমানের সাধারণ মানুষ।
ছবি - সুরজ প্রসাদ