ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,মাধবডিহি :মাধবডিহির নয়নজুলিতে ফেলে যাওয়া বস্তাবন্দি খোকন মাঝি খুনের ঘটনার পুনঃনির্মাণ করলো মাধবডিহি থানা।মঙ্গলবার বর্ধমান সদর দক্ষিণের এসডিপিও শৌভনিক মুখার্জীর উপস্থিতিতে এই পুনঃনির্মান প্রক্রিয়া চলে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খোকন মাঝিকে খুন করে বাপ্পাদিত্যই।পরে দেহ লোপাটে প্রত্যক্ষ ভুমিকা নেয় স্ত্রী তাপসী মাঝি। এছাড়াও দেহ লোপাটে বাপ্পার এক শাগরেদও জড়িত বলে বাপ্পা স্বীকার করেছে।পুলিশ তারও খোঁজ চলাচ্ছে। এদিন পুনঃনির্মানের সময় খোকন মাঝির পরিবারের তরফে তার ছোট ভাই ও মেয়েও উপস্থিত ছিলো। ছিলো বাপ্পার পরিবারের তরফেও কয়েকজন। সকলের উপস্থিতিতেই কিভাবে খুন ও পরে দেহ লোপাট করা হয়েছিল তা দেখায় বাপ্পা।স্বীকারও করে খুন সেই করেছে।এমনকি খোকনের স্ত্রী তাপসির সঙ্গে যে তার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে সে কথাও স্বীকার করে বাপ্পা ও তাপসী দুজনেই। এদিকে এই ঘটনায় বাপ্পার ব্যবহৃত সাইকেলও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, গত বুধবারই সকালে বর্ধমানের মাধবডিহি থানার বর্ধমান-আরামবাগ রোডের নন্দকুমার ঢাল এলাকায় নয়ানজুলি থেকে পুলিশ উদ্ধার করেছিল বস্তাবন্দি এক পুরুষের মৃতদেহ। আর তারপরেই তদন্তে নেমে মাধবডিহি থানার পুলিশ বুধবার রাত্রেই প্রথমে মৃতের স্ত্রী এবং পরে প্রেমিককেও আটক করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, হুগলীর গোঘাট থানার পানপোতা এলাকার বাসিন্দা খোকন মাঝি (৩৮) এবং তাঁর স্ত্রী তাপসী মাঝি ওই গ্রামেরই অবস্থাসম্পন্ন কৃষক বাপ্পাদিত্য পানের বাড়িতে কাজ করত। বাপ্পাদিত্যের প্রায় সাড়ে পাঁচ বিঘে জমি ছাড়াও একলাক্ষি বাজার এলাকায় একটি দোকানঘরও রয়েছে। তারও দেখভাল করত খোকন মাঝি।
পুলিশ জানায়, বেশ কিছুদিন ধরেই তাপসী মাঝির সঙ্গে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বাপ্পাদিত্যের। তা নিয়ে খোকন মাঝির সঙ্গে অশান্তিও চলছিল। এমনকি পাড়ার বাসিন্দারাও এই বিষয় নিয়ে খোকনকে কটাক্ষও করত। ফলে ক্রমশই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠছিল। ইতিমধ্যে দশমীর দিন সন্ধ্যায় বাপ্পাদিত্য খোকনকে বাজারে ডেকে নিয়ে গিয়ে মদ খাওয়ায়। এই সময়ই ফের তাপসী প্রসঙ্গ ওঠে। সেই সময় বাপ্পা খোকনকে মারধোর করে। তাতেই ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় খোকনের। মৃতদেহ সরাতে এরপর বাপ্পা খোকনের লুঙ্গি দিয়েই ঘাড়ের সঙ্গে হাত পা বেঁধে ফেলে। পরে একটি বস্তায় মৃতদেহ ভরে বস্তার মুখ সাইকেলের টিউব দিয়ে বেঁধে ফেলে খোকনের সাইকেলেই তা চাপিয়ে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬ কিমি দূরে মাধবডিহি থানার নন্দকুমার ঢালের কাছে নিয়ে আসে।
কিন্তু নন্দকুমার ঢালের কাছে কুকুর তাকে তাড়া করলে সেখানেই বস্তাবন্দি মৃতদেহ ফেলে পালিয়ে যায় বাপ্পা। এদিকে, বুধবার সকালে বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধারের পর মৃতের শ্যালক দেবু রায় মাধবডিহি থানায় এসে মৃতদেহ সনাক্ত করে। অন্যদিকে, খোকনের হাতে উল্কিতে লেখা তাপসীর নাম দেখে তাপসীকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। পুলিশী জেরায় ভেঙে পড়ে তাপসী। স্বীকার করেন বাপ্পার সঙ্গে বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের কথা। এরপরই পুলিশ বৃহঃস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ বাপ্পাদিত্য ও তাপসীকে গ্রেপ্তার করে।
ফাইল চিত্র

