Headlines
Loading...
বর্ধমানে দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি করে দিলেন তৃণমূলের জেলা নেতা খোকন দাস

বর্ধমানে দলের অস্বস্তি বাড়িয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি করে দিলেন তৃণমূলের জেলা নেতা খোকন দাস


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: ফের তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার তথা তৃণমূল জেলা কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন দাসের বক্তব্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হলো বর্ধমান শহরে। কাঞ্চননগরে দলীয় প্রকাশ্য কর্মী সম্মেলনে সোমবার দলেরই কিছু নেতার বিরুদ্ধে রীতিমত বিস্ফোরক ভাষণ দিয়ে রীতিমত বিতর্ক সৃষ্টি করলেন খোকন দাস। যাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই শহর জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই খোকন দাসের এই কর্মী সম্মেলনের বিতর্কিত বক্তব্যের ক্লিপিং তৃণমূলের রাজ্য নেতাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এই একই ক্লীপিং পৌঁছে দেওয়া হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর কাছেও। এমনকি এই কর্মী সম্মেলনে কারা কারা ছিলেন তাদেরও তালিকা তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। 

দলেরই এই কর্মী সম্মেলনে খোকন দাস অভিযোগ করেছেন, শহরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কিছু লোকের হাতে কাগজ দিয়ে বলা হয়েছে তারাই নাকি নেতা। আসলে এই কাগজ দিয়ে তাদের তোলাবাজি করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের এই কাগজধারীরা তৃণমূলেরই অফিস দখল করছে, মারধর করছে, তৃণমূলের কর্মীদের মেরে হাত পা ভেঙে দেওয়ার নিদান দিচ্ছেন। কিন্তু দলনেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় কিংবা অভিষেক বন্দোপাধ্যায় কি এসব করতে বলেছেন? প্রশ্ন তুলে খোকন বলেন, এসব চলতে দেওয়া যাবে না। তাঁরা এর প্রতিবাদ করছেন। রাজ্য নেতাদেরও জানাচ্ছেন। একটা অরাজকতা চলছে। তৃণমূল দলটাকে শেষ করে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন দলেরই কিছু নেতা। আর এই চক্রান্তে সামিল হয়েছে একসময়ের সিপিএমের নেতা আইনুল হক। ইতিমধ্যেই তিনি তৃণমূলের কর্মসূচী পালনে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়েছেন। এদিন তাঁর নাম করেই খোকন দাস বলেন, যে নেতার দাপটে একদিন বর্ধমান শহরের নেতারা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারতেন না, আজ তাকেই তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব দলের লোক করে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। দরকার হলে দল ছেড়ে দিতেও সময় লাগবে না। ওই আইনুলের নেতৃত্বে মিছিল মিটিংয়ে হাঁটা অন্তত তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। 

খোকন দাস বলেন, একসময় যিনি সিপিএমের পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন (আইনুল হক) তিনি এখন তৃণমূলে এসে বলে বেড়াচ্ছেন, খোকন দাস পুরসভার সব টাকা মেরে দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছে। খোকন দাস বলেন, তিনি পুরসভা চালাননি। পুরসভা চালিয়েছেন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি ছিলেন একজন চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল। শুধু তাইই নয়, তাঁরা যখন পুরসভা ছেড়ে আসেন তখন পুরসভার ফাণ্ডে কত কোটি টাকা রেখে এসেছেন তার খবর না রেখেই মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছেন এই নবাগত তৃণমূলীরা। ক্ষমতা থাকলে প্রমান করে দেখাক পৌরসভায় খোকন দাসের একটাও দুর্নীতি।

খোকন বলেন, এইসব নেতাদের জন্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যদি ক্ষমতা থাকে খোকন দাসের বিরুদ্ধে রাজ্য বা জেলা নেতারা একটাও দুর্নীতির প্রমান দিয়ে দেখাক। এমনকি অনেকেই বলছেন, খোকন দাস কি ভাবে কাঞ্চন উৎসব করে, কিভাবে গণবিবাহ করে? তার টাকার উৎস কি? তাঁদের উদ্দেশ্যে এদিন ভরাভর্তি কর্মীসভার মঞ্চ থেকেই খোকন দাস বলেন, রাজনীতি করলেই হয় না। মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করতে হয়। মানুষই মানুষের জন্য ভালো কাজে এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। যদি কেউ প্রমান করে দিতে পারে যে খোকন দাস এই সমস্ত কার্যকলাপ করতে গিয়ে কোনো দুর্নীতি করেছে, তাহলে তাকে তাঁর সম্পত্তি লিখে দিতেও পিছপা হবেন না তিনি। 

আর খোকন দাসের এই বক্তব্যকে ঘিরেই এদিন শহর জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্য।  তিনি এদিন বলেন,  তৃণমূল করতেন বলেই ২০১৩-র পর পৌরসভায় অনেকেই চাকরি পেয়েছেন। আর এখন যদি মনে করেন গোপনে গোপনে বিজেপি করে তৃণমূলের ক্ষতি করবেন তাতে কোনো লাভ হবে না। সব হিসেব রাখা আছে। আমরা যদি মনে করি আবার চাকরি থেকে সরিয়ে দেবো। তখন মা, বউকে নিয়ে পায়ে এসে ধরলেও কিছু হবে না। সুতরাং, যারা দলের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছেন তারা দলটার সঙ্গে থাকুন। উল্লেখ্য এদিন কর্মী সম্মেলনে হাজির ছিলেন বর্ধমান পুরসভার একাধিক প্রাক্তন কাউন্সিলার, ছাত্র নেতা, জেলা নেতারাও। যদিও খোকন দাস এদিন পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, আজকাল শহরের অনেকেই পায়জামা পাঞ্জাবি পরে দলের হয়ে নেতাগিরি করছেন। একদিন তারা ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াতেন। এই খোকন দাস টাকা দিয়ে, লোক দিয়ে দলের কর্মীসূচী পালন করতেন। মিছিল, মিটিং করাতেন। আর আজকের এই নেতারা প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেন। বর্ধমানের মানুষ সব দেখেছেন। তাই খোকন দাসকে যদি কেউ মনে করে বোকা, তারা নিজেরাই মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});