Headlines
Loading...
করোনার অন্ধকারে প্রদীপের আলো সেই লক্ষ্মীর ভাঁড়, অসময়ের ভরসা

করোনার অন্ধকারে প্রদীপের আলো সেই লক্ষ্মীর ভাঁড়, অসময়ের ভরসা


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: প্রতিমাদি। অন্যের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। বর্ধমান শহরের বাসিন্দা। অভাবের সংসার। স্বামী দিন মজুরের কাজ করেন। একটি ছেলে একটি মেয়ে। লকডাউনের জেরে নাভিশ্বাস সংসারে। চারজনের সংসারের বোঝা যেন আরও ভারী হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, রাজনৈতির দলগুলির পক্ষ থেকে কিছু কিছু খাবার পেলেও সংসার চালাতে দরকার নগদ অর্থের। ব্যাংক, এটিএম নয়। শেষ পর্যন্ত ভরসা সেই তিল তিল করে জমানো ১ টাকা, ২ টাকা, ৫টাকা, ১০ টাকার কয়েন। গত এক সপ্তাহে নয়নয় করেও প্রায় ১০০ টাকা বার করেছেন লক্ষ্মীর ভাঁড় থেকে। তাই দিয়েই কোনোরকমে সামাল দিচ্ছেন সংসারের অভাবকে।

বস্তুত, চলতি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এখন শয়ে শয়ে দিন আনা খাই – মানুষের একমাত্র ভরসা এই লক্ষ্মীর ভাঁড়। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে যা ক্রমশই হারিয়ে যেতে বসেছে। এটিএম, গোষ্ঠী ঋণ – অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে লক্ষ্মীর ভাঁড়কে। কিন্তু আজ এই দুর্দিনে বাকিরা সবাই চলে গেলেও চৌকির তলা থেকে বার করে আনা প্রতিমাদির এখন ভরসা এই লক্ষ্মীর ভাঁড়। প্রতিমাদির ভাষায় – অতসত বুঝি না। মা বাবাদের কাছে শুনে এসেছি - যাকে রাখবে সেই রাখবে। তাই যখন পয়সা পেয়েছি ভাঁড়ে ফেলেছি। আজ সেই ভাঁড়ই এখন তার সংসারকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

তবে কতদিন? প্রতিমা মাল জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে কখনও ভাবিনি। তবে এটা ঠিক যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হোক বা না হোক তিনি সবাইকে বলবেন – লক্ষ্মীর ভাঁড়কে দূরে নয়, আপন করে নিতে হবে। শুধু প্রতিমাদিই নয়, খোদ বর্ধমান শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধু রাজশ্রীদেবী। তিনিও জানিয়েছেন, অনেকটা মজা করার ছলেই তিনি একদিন একটা পাড়ার মুদির দোকান থেকে কিনে নিয়ে এসেছিলেন একটি ভাঁড়। উদ্দেশ্য ছিল গোটা ভাঁড়কে পরিপূর্ণ করে তোলার। দেখার ইচ্ছা ছিল কত টাকা জমানো যায়। কিন্তু করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সত্যিই তাঁকে সামলে দিয়েছে এই ভাঁড়।

কার্যত এই করোনা পুরনো দিনকেই ফের ফিরিয়ে দিয়েছে। বুঝিয়ে দিয়েছে সংসার চালাতে গেলে মহিলাদের এই অভ্যাসটা বজায় রাখা দরকার। তিনি জানিয়েছেন, চলতি লকডাউনের সময় ব্যাংক বা এটিএমে যাওয়া বেশ কিছুটা বিড়ম্বনাও। বাইরে বের হতে ভয় লাগছে। আবার বের হলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ। এই অবস্থায় রীতিমত ভরসা দিয়েছে লক্ষ্মীর ভাঁড়। তিনি জানিয়েছেন, শুধু কয়েনই নয়, যখন যে্মন পেরেছেন টাকাও রেখেছিলেন। আজ বড় কাজ দিচ্ছে। এদিকে, যখন গ্রাম বাংলার মানুষ থেকে শহুরে মধ্যবিত্তরা রীতিমত লক্ষ্মীর ভাঁড় ভেঙে সামাল দেবার চেষ্টা করছেন সেই সময় খোদ বর্ধমানের বেশ কয়েকটি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, লকডাউনের সময় নেহাতই বাড়ির একঘেঁয়েমি কাটাতে বহু গ্রাহক অহেতুক ব্যাংকে এসেছেন টাকা তোলার নাম করে।

বর্ধমান শহরের রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এক অফিসার জানিয়েছেন, তাঁরা লক্ষ্য করেছেন, এমন বহু ব্যক্তি এই সময়কালে ব্যাংকে আসছেন টাকা তোলার জন্য। কিন্তু তাঁরা যে পরিমাণ টাকা তুলছেন, পরেরদিন কিংবা তা দিন দুয়েক পরেই এসে সমপরিমাণ টাকা বা তার থেকেও বেশি টাকা ফের জমা দিয়ে যাচ্ছেন। পরিসংখ‌্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, যে ব্যক্তি মাসে একদিনও ব্যাংকে আসতেন না,তিনিই নয়নয় করে গড়ে সপ্তাহে একদিন বা দুদিন করে ব্যাংকে আসছেন।

আবার এমন ব্যক্তিকেও পাওয়া গেছে যাঁরা ব্যবসাদার নন, প্রতিদিন টাকা লেনদেনের মত কোনো কারবারেও তাঁরা যুক্ত নন, তাঁরাও একইভাবে টাকা তোলার নাম করে বা টাকা জমা দেবার নাম করে ব্যাংকে আসছেন। আর এর থেকেই স্পষ্ট, লকডাউনের এই সময়ে বাড়িতে একঘেঁয়েমি কাটাতেই তাঁরা ব্যাংককে হাতিয়ার করছেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});