Headlines
Loading...
ঘোর সংকটে বেসরকারী স্বাস্থ্যক্ষেত্র, স্বাস্থ্যসাথীর বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

ঘোর সংকটে বেসরকারী স্বাস্থ্যক্ষেত্র, স্বাস্থ্যসাথীর বকেয়া মিটিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,পূর্ব বর্ধমান: দীর্ঘ লকডাউনের জেরে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত মানুষের পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও নেমে এসেছে ঘোর সংকট। পরিবহন ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জেলার নার্সিংহোম এবং বেসরকারি হাসপাতাল গুলিতে রোগীর সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর এরফলে কার্যত প্রতিষ্ঠান চালাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে কতৃপক্ষগুলিকে। আর এই অবস্থার কথা মাথায় রেখেই রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর মিটিয়ে দিতে শুরু করেছে বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বকেয়া স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের টাকা।

পূর্ব বর্ধমান জেলা নার্সিংহোম ওনার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা সান হাসপাতালের মালিক সেখ আলহ্বাজউদ্দিন জানিয়েছেন, করোনার জেরে সত্যিই তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। কি করে তাঁরা টিকে থাকবেন তাই এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় বর্তমানে ১০৬টি বেসরকারী নার্সিংহোম চালু রয়েছে। কিন্তু এরমধ্যে বেশ কিছু নার্সিংহোম কার্যত বন্ধের মুখে যেতে বসেছে। আদপেই তাঁরা আর মাথা তুলে দাঁড়াবেন কিনা সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, নার্সিংহোমকে তাঁরা বন্ধ করতে পারেননি। ফলে তাকে সচল রাখতে প্রতিদিনের বিদ্যুত খরচ, কর্মী, নার্স, চিকিৎসক প্রভৃতি খাতে ব্যয় যথারীতি একই রয়েছে। কিন্তু রোগী নেই। 

তিনি জানিয়েছেন, কেবলমাত্র গত এপ্রিল মাসেই তাঁর হাসপাতালে লোকসান হয়েছে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা। আবার মার্চ মাসের ২২ তারিখ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ায় মার্চ মাসে লাভ ও লোকসানের দু মুখ সমান হয়ে গেছে। তিনি জানিয়েছেন, চলতি মে মাসেও এই ঘাটতি আরও বাড়বে। তিনি জানিয়েছেন, পরিস্থিতির চাপে পড়ে অনেক নার্সিংহোম মালিক স্টাফেদের বেতন দিতে পারছেন না। কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন স্টাফেরা। যদিও এব্যাপারে তাঁরা এ্যাসোসিয়েশনগত ভাবে কর্মীদের বেতন মিটিয়ে দেবার আবেদন করেছেন সকলের কাছে। 

আলহ্বাজউদ্দিন জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির মাঝে পড়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন যাতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বকেয়া টাকাগুলো সরকার দ্রুত মঞ্জুর করেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের আবেদন মেনে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য সাথীর বকেয়া অর্থ তাঁদের দেওয়া শুরু করে দিয়েছেন। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন এই খাতের টাকা ১০০ শতাংশই তাঁরা ছেড়ে দিয়েছেন। আলহ্বাজউদ্দিন জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার বেসরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই উদ্যোগ না নিলে তাঁরা আরও সংকটের মুখে পড়তেন।

পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর মহকুমার একটি নামী বেসরকারী হাসপাতালের মালিক সুজিত দত্ত জানিয়েছেন, তাঁর চিকিত্সাকেন্দ্রটিকে সচল রাখতে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ চলতি সময়ে তাঁর রোগীর সংখ্যা ৭০-৮০ শতাংশ কমে গেছে। এখন প্রতিদিনের খরচ তোলা তো দূর অস্ত গত প্রায় ২ মাসে ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়েছেন তাঁরা।

আলহ্বাজউদ্দিন সাহেবের দাবী, জেলার প্রায় ৭০শতাংশ বেসরকারী নাসিংহোমই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড ব্যবহারের জন্য অনুমোদনপ্রাপ্ত। তিনি জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য সাথী কার্ডের এই অর্থ এতদিন পেতে দীর্ঘ কয়েকমাস লেগে যেত। ফলে নার্সিংহোমগুলির বকেয়ার পরিমাণও কয়েক কোটি টাকা করে জমা পড়ে যেত। এবার সেই বকেয়া টাকা পাওয়ায় তাঁদের সুবিধা হলেও করোনার এই পরিস্থিতি দ্রুত কেটে যাওয়া এবং সুস্থ স্বাভাবিক জনজীবন শুরু না হলে তাঁদের পরিষেবা ক্রমশই বন্ধ হতে শুরু করবে।

পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম জানিয়েছেন, পূর্ব বর্ধমান জেলায় এখনও পর্যন্ত মোট স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড বিলি হয়েছে ৭ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮০৯টি। এর মধ্যে ৩৫ হাজার কার্ড ব্যবহার হয়েছে। যার মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন ৫১ হাজার ৮৫১ জন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড ব্যবহারের জন্য সরকার এখনও পর্যন্ত দিয়েছে এই জেলায় প্রায় ৫৭ কোটি ২ লক্ষ টাকা। বাগবুল ইসলামও জানিয়েছে্ন, করোনার জেরে বেসরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিও খুবই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। তবে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});