Headlines
Loading...
মালয়েশিয়ায় আটকে থাকা যুবককে বাড়ি ফিরিয়ে আনা থেকে দীর্ঘদিনের প্রেমের পরিনতি ঘটিয়ে নজির সৃষ্টি মেমারী পল্লীমঙ্গল সমিতির

মালয়েশিয়ায় আটকে থাকা যুবককে বাড়ি ফিরিয়ে আনা থেকে দীর্ঘদিনের প্রেমের পরিনতি ঘটিয়ে নজির সৃষ্টি মেমারী পল্লীমঙ্গল সমিতির


ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ দুটি পরস্পর বিরোধী ঘটনা। কিন্তু দুটি ঘটনাতেই নজীরবিহীনভাবে নিজেদের সামাজিক কাজের মূল্যায়ন ঘটালো মেমারীর পল্লীমঙ্গল সমিতি। প্রথম ঘটনাটি রীতিমত করুণ। মেমারীর সাঁচরার নীলকুঠি এলাকার বাসিন্দা মনোজিত সরকার। প্রায় এক বছর আগে মালয়েশিয়া যায় সেখানকার বনদপ্তরের কাজে। গতবছর দুর্গাপুজোর সময় বাড়িতে এসেছিল। মনোজিতের মা শেফালী সরকার (৬২) বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তাঁকে ভর্তি করা হয় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে রাধারাণী ওয়ার্ডে তিনি বিকাল ৫টা নাগাদ মারা যান। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় মনোজিতকে। পাঠানো হয় মায়ের মৃত্যু সার্টিফিকেটের কপিও। কিন্তু কোম্পানী তাকে ছাড়েনি।

এরপরই মনোজিতের এক আত্মীয় দ্বারস্থ হন পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতির সম্পাদক সন্দীপন সরকারের কাছে। তিনি যোগাযোগ করেন মালয়েশিয়ার ওই কোম্পানীর সঙ্গে। তাঁরা জানিয়ে দেন, সরকারীভাবে কোনো চিঠি না পেলে তাঁরা মনোজিতকে ছাড়বেন না। এরপরই সন্দীপন সরকার ছুটে যান দলুইবাজার ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতে। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ঝুমা কোঁড়া দ্রুততার সঙ্গে সার্টিফিকেট দেন। সেই সার্টিফিকেট নিয়ে সন্দীপনবাবু এবং মনোজিতের আত্মীয় নন্দ বিশ্বাস এবং মনোজিতের বন্ধু প্রিয়হরি বিশ্বাস যান মেমারী থানায়। গোটা বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে মেমারী থানার ওসি সুদীপ্ত ব্যানার্জ্জী থানা থেকেই ই-মেল করেন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। কিন্তু ততক্ষণে অনেকটাই দেরী হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে অফিস খুললে সেই মেল দেখে ১ মাসের জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হয় মনোজিতকে। সঙ্গে সঙ্গে বিমানে কলকাতা এবং সেখান থেকে শুক্রবার ভোরে তিনি বাড়ি ফেরেন। কিন্তু ততক্ষণে পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায় শেফালীদেবীর দেহ। মায়ের শেষ দেখা হয়নি মনোজিতের।

নন্দ বিশ্বাস জানিয়েছেন, গত ১ বছরে মালয়েশিয়ায় রবার সংগ্রহের এই কাজে বর্ধমান সহ নদীয়া এবং আশপাশের অনেক জেলা থেকেই যুবকরা কাজে যান। কিন্তু কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকেই মাঝপথে চলে আসেন বাড়ি। তাই যাঁরা টিঁকে গেছেন তাদের পাসপোর্ট আটকে রাখেন কোম্পানী। মনোজিতের পাসপোর্টও তাই আটকে রাখেন ওই কোম্পানী। যদিও পল্লী মঙ্গল সমিতির দ্রুত উদ্যোগে তার ছাড়পত্র গেলেও মাকে শেষ দেখার মনকষ্ট ভুলতে পারছেন না মনোজিত। এমনকি বাড়ি ফিরেও সে রীতিমত মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। জানিয়েছেন, পল্লী মঙ্গল সমিতি যে কাজ করেছে তা নজীরবিহীন। একটা স্বেচ্ছাসেবী ক্লাব হয়েও এই ধরণের উদ্যোগ অনেক ক্লাবকেই পথ দেখাবে।

পল্লী মঙ্গল সমিতির সাম্প্রতিক একাধিক নজীরবিহীন কাজকর্ম আলোড়ন ফেলেছে গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে। কখনও প্ল্যাষ্টিক মুক্ত নদীর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়া, কখনও সেভ ড্রাইভ, সেফ লাইফের শ্লোগানকে জীবনের সঙ্গে যুক্ত করতে আস্ত পাল্লা গ্রামকেই দুর্ঘটনামুক্ত গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার কাজ করে তাঁরা আলোড়ন ফেলেছে। শুধু তাই নয়, একদিকে যখন মালয়েশিয়ায় আটকে থাকা মনোজিতকে উদ্ধার করে নিয়ে আসায় হাত লাগিয়েছে এই সমিতি সেই সময় দীর্ঘ সাড়ে ৩ বছরের প্রেমের পরিণতি দিতেও তারা এগিয়ে এসেছে। পাল্লা রোডের মামুদপুরের কার্তিক দাসের ছেলে সুশান্ত দাসের সঙ্গে সাড়ে ৩ বছর ধরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে জামালপুরের খোরদো পলাশী গ্রামের পাঁচু মুদীর মেয়ে চুমকি মুদীর। কিন্তু পাড়ার জটিলতায় তাদের মিলন পর্বহচ্ছিল না।


এদিকে, এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চুমকি সরাসরি হাজির হয়ে যায় সুশান্ত দাসের বাড়ির সামনে। তাকে বিয়ে ও স্বীকার না করলে আত্মহত্যারও হুমকি দিতে থাকে। সকাল থেকে এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায়। এরই মাঝে সত্যি সত্যিই আত্মহত্যার চেষ্টাও করে সে। প্রায় ২দিন ধরে একটানা চুমকির এই নাছোড়বান্দা ঘটনায় এগিয়ে আসেন পল্লীমঙ্গল সমিতির সদস্যরা। দুটি পরিবারকে নিয়ে তাঁরা আলোচনায় বসেন। ডেকে পাঠানো হয় দলুইবাজার ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকেও। এরপরই জটিলতা কাটে। কিন্তু সুশান্ত দাসের আর্থিক অবস্থা এমনই যে বিয়ের মত অনুষ্ঠান তো দূরের কথা, সামান্য বিয়ে করতে যাবার জন্য নতুন জামা কাপড় কেনারও সামর্থ্য ছিল না। এখানেও এগিয়ে আসেন পল্লী মঙ্গল সমিতির সদস্যরা। অবশেষে প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর পাল্লা রোড মধ্যবাজার কালী মন্দিরে শুভপরিণয়ের মধ্য দিয়ে চার হাত এক হল। শুক্রবার তাদের আইনি বিয়েও হল।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});