

ফোকাস বেঙ্গল ডেস্ক,বর্ধমানঃ ফের বর্ধমান ষ্টেশন লাগোয়া লোকো কলোনী এবং লোকো আমবাগান কলোনীতে রেলের জায়গায় থাকা জবরদখল উচ্ছেদের নোটিশকে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল। জানা গেছে, গত ৯ আগষ্ট পূর্ব রেলের সিনিয়র এ্যাসিস্ট্যাণ্ট ইঞ্জিনিয়ার একটি নোটিশ দিয়ে বর্ধমান ষ্টেশন সংলগ্ন এই উচ্ছেদের কথা জানিয়েছেন। আর তারপরেই পুজোর মুখে উচ্ছেদের আতংকে ভুগতে শুরু করেছেন এই কলোনী এলাকার প্রায় ৫০০-রও বেশি মানুষ। ফলে গোটা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
এই এলাকার তথা বর্ধমান পুরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, সম্প্রতি রেল তাদের জায়গা ঘিরে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে সর্বত্রই। বর্ধমান শহর তথা বর্ধমান ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকাকেও ঘিরে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই ঘিরে নেবার কাজ করতে গেলে কমবেশী প্রায় ৫০০ পরিবার যাঁরা রেলের জায়গায় দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন তাঁদের উচ্ছেদ হতে হবে। মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, এর আগেও রেল কর্তৃপক্ষ একাধিক জায়গায় উচ্ছেদ করেছে। তিনি তাঁদের সহযোগিতাও করেছেন একজন স্থানীয় কাউন্সিলার হিসাবে। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারের কয়েকজনকে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় পুনর্বাসনও দিয়েছেন। কিন্তু গত প্রায় ৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে বর্ধমান পুরসভায় কোনো নির্বাচিত বোর্ড নেই। প্রশাসক দিয়ে চলছে। ফলে তাঁর সরকারী ক্ষমতাও নেই।

তিনি জানিয়েছেন,পুজোর মুখে রেলের এই উচ্ছেদ কর্মসূচী পালিত হলে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক হয়ে পড়বে ওই পরিবারগুলির পক্ষে। সেলিম সাহেব জানিয়েছেন, এর আগেও রেল কর্তৃপক্ষ এই আমবাগান কলোনী এবং লোকো বাজার এলাকায় উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দিয়েছিল, কিন্তু এলাকার মানুষের স্বার্থে রেলকে উচ্ছেদ না করার জন্য অনুরোধ করায় তাঁরা তা স্থগিত রাখেন। কিন্তু যেহেতু তিনি এখন আর কাউন্সিলারের ক্ষমতায় নেই তাই এবার কিভাবে রেলকে আটকাবেন তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেলিম সাহেব জানিয়েছেন, রেলের জায়গায় যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন এমনকি এই জায়গার ওপর তৈরী হয়েছে লোকো বাজারও তাঁদের উচ্ছেদ করা হলে তাঁরা কোথায় যাবেন তা নিয়েই গোটা এলাকায় এই মুহূর্তে আতংক ছড়িয়েছে।
পাশাপাশি সেলিম সাহেব জানিয়েছেন, একটা সময় যাঁরা রেল কলোনী এলাকায় নানা ধরণের অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁদের ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়ায় এখন অনেকেই পুরনো সেই সমস্ত অসামাজিক কার্যকলাপ ভুলে নতুন করে বাঁচার রাস্তা খুঁজে পেয়েছেন। এখন ফের উচ্ছেদ হলে আবার তারা অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে সব মিলিয়েই রেলের এই উচ্ছেদ পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। যদিও সেলিম সাহেব জানিয়েছেন, আসন্ন দুর্গাপুজোর আগে যাতে রেল এই উচ্ছেদ না করে সেজন্য তিনি চিঠি দিয়ে আবেদন জানাবেন।

অন্যদিকে, রেল সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩১ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে এই দুটি জায়গায় উচ্ছেদ শুরু হবে। ইতিমধ্যেই এই উচ্ছেদের জন্য জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার সহ সর্বত্র জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রেল নোটিশ দিয়ে জানিয়েছেন, পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ রেলের জায়গায় থাকা সমস্ত জবরদখল মুক্ত করার কাজ শুরু করেছে। তাই কোনো বিকল্প না থাকায় বর্ধমানের এই আমবাগান কলোনী এবং লোকো বাজার এলাকায় থাকা জবরদখল উচ্ছেদ করবেনই। অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন,পুজোর মুখে তাঁদের ঘরছাড়া হতে হলে সমস্যায় পড়বেন। ইতিমধ্যেই তাঁরা রেলের কাছে পুনর্বাসনের জন্য দাবী জানাবেন বলে জানিয়েছেন।